ফুলন দেবী ছিলেন ভারতের নিম্নশ্রেণির কিশোরী থেকে প্রথমে ডাকাত দলের সরদার এবং পরে একজন রাজনীতিবিদ। ‘দস্যু রানি’ নামেই তিনি বেশি পরিচিত।
ভারতের উত্তর প্রদেশের জালৌন জেলার ঘোড়া কাপুরয়া এলাকায় নিম্নবর্ণের মাঝি সম্প্রদায়ে ফুলন দেবীর জন্ম ১৯৬৩ সালের ১০ আগস্ট।
১১ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। তিনি স্বামী কর্তৃক বলপূর্বক ধর্ষণের শিকার হন। একসময় তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন। জ্যাঠাতো ভাই মায়াদিন তাঁর পিতার সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে। এর বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেও হেরে যান। একসময় মায়াদিন তাঁর বিরুদ্ধে চুরির মামলা দিয়ে জেলবন্দী করে। জেলে ফুলন পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন। তিন মাস পর জেল থেকে তিনি বের হয়ে সমাজের সব অপমানের প্রতিশোধ নিতে ডাকাত দলে যোগ দেন।
ঠাকুর সম্প্রদায়ের উচ্চবর্ণের পুরুষদের হাতে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ফুলন দেবী। সেই গণধর্ষণের বদলা নিতে ২০ জন ঠাকুর সম্প্রদায়ের পুরুষকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেছিলেন ফুলন দেবী এবং তাঁর দলের সদস্যরা। সেই ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা ‘বেহমাই হত্যাকাণ্ড’ নামে খ্যাত। ঘটনার চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ভিপি সিং।
এই হত্যাকাণ্ডের পরেই ফুলন দেবীর নাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর একটি সাধারণ ক্ষমা প্রকল্পের অধীনে গণহত্যার দুই বছর পর মধ্যপ্রদেশে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত জেলে ছিলেন। পরে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফুলন দেবী। তবে বেশির ভাগ অপরাধ তিনি নির্যাতিত নারী, বিশেষ করে দলিত সম্প্রদায়ের নারীদের ন্যায্যতা প্রদানের জন্য করেন।
তাঁর জীবনকাহিনি নিয়ে লেখা হয়েছে ‘ইন্ডিয়াস ব্যান্ডিট কুইন: দ্য ট্রু স্টোরি অব ফুলন দেবী’ বইটি। তাঁকে নিয়ে সিনেমাও হয়েছে।
২০০১ সালের ২৫ জুলাই তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে