বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভারতীয় পণ্য বয়কটের প্রচার চলছে। এই প্রচারে ভারতীয় পণ্যসহ দেশটিকে ‘বয়কট’–এর আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন চলছে। এ নিয়ে ফেসবুকে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ। প্রায় ৮০ হাজার সদস্যের ‘বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস’ নামের এমন একটি গ্রুপে গত ৬ এপ্রিল ‘মায়ের দোয়া’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে দাবি করা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার ভারতীয় পেঁয়াজসহ কিছু কাঁচা পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পোস্টটিতে আজ রোববার (৮ এপ্রিল) রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রিয়েকশন পড়েছে। পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ২০০–এর বেশি।
একই তথ্য সংবলিত আরেকটি পোস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নাম ও ছবি ব্যবহার করে খোলা ৩ লাখ ১৭ হাজার সদস্যের আরেকটি গ্রুপ থেকেও ভাইরাল হতে দেখা গেছে। পোস্টটি দেওয়া হয় বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার নামে খোলা একটি ফেসবুক পেজ থেকে। পেজটিতে ফলোয়ার আছে ২৪৮ জন। এটি গত ২০ মার্চ খোলা হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজসহ কিছু কাঁচা পণ্যের ওপর কাতারের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিতে পেজটি থেকে দেওয়া পোস্টটি প্রায় ৪০০ শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ভাইরাল পোস্টগুলো যাচাই করে দাবির পক্ষে কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে কাতার ভিত্তিক ইংরেজি সংবাদমাধ্যম কাতার ট্রিবিউনের অনলাইন সংস্করণে গত ২৫ মার্চ ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, পেঁয়াজ রপ্তানি আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর ডিজিএফটি এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশটি এ পণ্য রপ্তানি স্থগিত রেখেছিল। সেই সময়ের ঘোষণা অনুযায়ী, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এখন নতুন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য রপ্তানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ডিজিএফটি।
প্রতিবেদনটিতে কাতারের ভারত থেকে পেঁয়াজসহ কাঁচা পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রাসঙ্গিক অন্যান্য কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানেও কাতারের ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে দাবিটি প্রসঙ্গে অধিকতর অনুসন্ধানে কাতারের বাণিজ্য এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট খুঁজে দেখে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
ওয়েবসাইটে ভারত থেকে পেঁয়াজ বা অন্য কোনো পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওয়েবসাইটটিতে আমদানি পণ্যের মূল্য তালিকা দেওয়া আছে। সেখানে আমদানিকৃত সবজি জাতীয় পণ্যের মূল্য সম্পর্কিত অংশে ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ ও কচুর মূল্য উল্লেখ রয়েছে। ভারতীয় লাল পেঁয়াজের নামও তালিকায় রয়েছে, তবে এই পণ্যের বিপরীতে কোনো দাম উল্লেখ নেই। মূল্য তালিকাটি সবশেষ গত ৪ এপ্রিল হালনাগাদ করা হয়েছে।
আবার আমদানি করা ফলের তালিকাতেও ভারত থেকে আমদানি করা ফলের নাম রয়েছে। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে— কলা, ডালিম ও আঙুর।
ভারতীয় সবজির মূল্য তালিকায় লাল পেঁয়াজের দাম উল্লেখ না থাকার একটি কারণ হতে পারে, ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানিতে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা।
অর্থাৎ, ভারতের পেঁয়াজসহ কাঁচা পণ্য আমদানিতে কাতারের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে