বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু সব সময়ই ছিলেন আলাভোলা ধরনের মানুষ। বিশ্বভারতীর উপাচার্য যখন তিনি, তখন প্রতিভা বসু তাঁর সন্তানদের নিয়ে একবার শান্তিনিকেতনে গিয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁদের সঙ্গে ছিলেন না। তাঁরা উঠেছিলেন পূর্বপল্লি গেস্ট হাউসে।
যখন ঢাকায় থাকতেন, তখন থেকেই সত্যেন বোসের সঙ্গে ভালো জানাশোনা ছিল প্রতিভা বসুর পরিবারের। ভীষণ স্নেহ করতেন তিনি প্রতিভা বসুকে। শান্তিনিকেতনে প্রতিভাকে দেখে খুশি হয়ে উঠলেন সত্যেন বোস। তাঁদের দেখা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ, রথীন্দ্রনাথের স্ত্রী প্রতিমা দেবীর বাড়িতে। কোনার্কে তখন থাকেন প্রতিমা দেবী। প্রতিভাকে দেখেই সত্যেন বোস বললেন, ‘এ কী রে, তুই এলি কবে?’ সন্তানদের দেখে বললেন, ‘এ দুটো কে আবার?’
এরপর যখন শুনলেন গেস্ট হাউসে উঠেছেন প্রতিভা বসু, তখন রাগ করে বললেন, ‘তুই জানিস না, আমি এখানে এসেছি। তাহলে গেস্ট হাউসে উঠলি কী ভেবে?’
প্রতিভা যখন কিছু বলছেন না, তখন তিনি আবার বললেন, ‘আমার কাছে থাকতে যদি তোর মানে লাগে, তাহলে তুই গেস্ট হাউসেই থাক। তোরা চল।’ বলে প্রতিভার সন্তানদের নিয়ে তিনি নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। অগত্যা গাড়িতে উঠতে হলো সবাইকে। গেস্ট হাউস থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে তাঁরা গেলেন উপাচার্যের বাড়িতে।
এরপর রয়েছে দুপুরে খাওয়ার প্রসঙ্গ। সত্যেন বোসের নির্দেশে অনেক কিছু রান্না হয়েছে। কিন্তু টেবিলে এসে তিনি বুঝতে পারছিলেন না, কী দিয়ে কী খাবেন। প্রথমে একটু ভাত নিলেন। তারপর হাত বাড়িয়ে নিলেন একটা কলা। এ সময় রাঁধুনি ছেলেটা এসে বলল, ‘ও কী করছেন বড় বাবু! কী খাচ্ছেন আপনি?’
সত্যেন বোস বললেন, ‘তুই তো দিদির অনারে খুব টেবিল সাজিয়েছিস!’
ছেলেটা বলল, ‘কলা দিয়ে তো দই খাবেন। ভাত খাবেন ডাল দিয়ে।’
সত্যেন বোসের বিকার নেই। তিনি এরই মধ্যে ভাতের সঙ্গে কলা মেখে খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন! ছেলেটি সেই প্লেট সরিয়ে ভদ্রমতো একটা প্লেট সত্যেন বোসের সামনে রাখল।
সূত্র: প্রতিভা বসু, জীবনের জলছবি, পৃষ্ঠা ২০৯-২১১
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে