কিশোরগঞ্জ জেলায় বেড়েছে জলবসন্তের (চিকেন পক্স) রোগী। শহর-গ্রাম—সবখানে দেখা যাচ্ছে এ রোগের প্রকোপ। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সীরা আক্রান্ত হচ্ছেন এ রোগে। আক্রান্তের পর তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন, দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। এতে রোগ ভালো না হয়ে অন্যদের মধ্যে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।
বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বলছে, জেলায় জলবসন্তের রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার। তবে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, দুই বছরে জেলায় প্রায় ২৫০ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ রোগ প্রতিরোধে সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম হাতে নেয়নি।
চিকিৎসকেরা বলছেন, মূলত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই রোগ বেশি হয়। হাঁচি, কাশি, থুতুর মাধ্যমে, একসঙ্গে থাকা ও খাওয়ার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে এ রোগ। জলবসন্তের ফোসকায় জীবাণু থাকে, এটি ফেটে গিয়েও রোগ ছড়াতে পারে।
সদর উপজেলার বৌলাইয়ের বাসিন্দা রিকশাচালক হান্নান মিয়ার মাথা, মুখ থেকে শুরু করে শরীরের সবখানে ফোসকা পড়েছে। তিনি এই অবস্থা নিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘কী করব বলেন, রিকশা না চালালে ভাতের ব্যবস্থা হবে কী করে?’
জেলা শহরের গাইটাল এলাকার ষাটোর্ধ্ব এক নারী গত বছরের জুলাই মাসে জলবসন্তে আক্রান্ত হন। তিনি দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়েছেন।
সদর উপজেলার সগড়া এলাকার তানিয়া আক্তার (১৭) তিন দিন আগে জলবসন্তে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছে। সেও বাড়ির পাশের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, ‘দিন দিন জলবসন্তে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসছেন চিকিৎসা নিতে। তবে বেশির ভাগ রোগীই আমাদের কাছে না এসে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন।’
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মীর নূর উস সাদ সৈকত বলেন, জলবসন্ত মূলত ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগ হলে আইসোলেশন অত্যাবশ্যকীয়। আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রচুর পরিমাণ তরলজাতীয় খাবার এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাবেন।
সিভিল সার্জন মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চিকেন পক্স ভয়ংকর রোগ না। এটি ছোঁয়াচে। আমার পরামর্শ থাকবে, আক্রান্তরা যেন আইসোলেশনে থাকেন এবং ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে