বিরতি নেই দোকানিদের। রাত প্রায় তিনটা থেকে শুরু হয়ে ইফতারের আগে আগে শেষ হয় ঘোল তৈরির কাজ। তারপর ইফতারের অনুষঙ্গ হিসেবে বোতলবন্দী হয়ে ক্রেতাদের হাতে হাতে চলে যায় সে ঘোল। রমজান মাসে এ ব্যস্ততার চিত্র দেখা যায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়।
ইফতারিতে বিভিন্ন ধরনের খাবারের মধ্যে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর একটা আলাদা কদর থাকে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সলপ এলাকার ঘোল তেমনই একটি খাবার। সারা দেশে এর পরিচিতি সলপের ঘোল হিসেবে। সারা বছর চাহিদা থাকলেও রোজার সময় বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
গ্রামের খামারিদের কাছ থেকে গরুর দুধ সংগ্রহ করে তা তিন-চার ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু এ ঘোল। এলাকার প্রবীণদের মতে, সলপ এলাকায় এ ঘোল তৈরির পেছনে আছে প্রায় ১০০ বছরের ঐতিহ্য। সারা বছরই এখানে ঘোল কিনতে লোকজন আসেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। তবে গরমের সময় উপাদেয় খাবার হিসেবে এর চাহিদা থাকে বেশি। চাহিদা বাড়ায় এ সময় দিনরাত কাজ করেন কারিগরেরা। এবার রোজা হচ্ছে গরমে। তাই এর চাহিদাও বেশি। স্থানীয়রা তো আছেনই, ইফতারের অনুষঙ্গ হিসেবে ঘোল কিনতে সলপে আসছেন দূরদূরান্তের লোকজনও।
উল্লাপাড়ার সলপ রেলস্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ছয়টি দোকানে ঘোল তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। স্টেশনের পাশে ঘোলের দোকানগুলোতে ক্রেতারা ভিড় করে পাত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। দোকানে বড় বড় স্টিলের হাঁড়িতে রাখা গরুর দুধে তৈরি ঘোল। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পাত্রে ঘোল দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ ক্রেতারা শুধু বাড়ির জন্যই এখানে ঘোল কিনতে আসেননি, পাইকারেরাও ঘোল কিনতে এসেছেন। এখান থেকে কিনে নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। আবার অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে পাঠানোর জন্যও কিনতে এসেছেন সলপের ঘোল।
পাবনা শহর থেকে ঘোল কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন। পুরো রমজান মাস এখান থেকে ঘোল ও মাঠা কিনে নিয়ে এলাকায় বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই মণ ঘোল এলাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যান সাজ্জাদ হোসেন। অন্যান্য জায়গার ঘোলের চেয়ে এখানকার ঘোলের দাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি হলেও এর কদর সবচেয়ে বেশি।
ঘোল উৎপাদনকারী আবদুল খালেকের সঙ্গে কথা হয় ঘোলের ব্যবসা ও অন্যান্য বিষয়ে। তিনি জানান, রমজান মাসে সলপের ঘোলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। রমজানের আগে ঘোলের চাহিদা ছিল প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মণ। রোজায় এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ মণ। এ হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন বলে আবদুল খালেকের মন ভালো নেই। এই ভরা ব্যবসার সময়ে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ঘোল উৎপাদন করতে পারছেন না তাঁরা। এলাকার মানুষকে ফেরাতে না পারলেও দূরদূরান্ত থেকে ঘোল কিনতে আসা অনেক ছোট ব্যবসায়ীকে প্রতিদিন ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। দুধের সংকট রয়েছে এলাকায়। চাহিদা পূরণ করতে পারলে উৎপাদন আর বিক্রির অঙ্কটা আরও বড় হতো। সঙ্গে লাভের অঙ্কটাও।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল হোসেন জানান, রমজান মাসে সলপের ঘোলের চাহিদা বেড়ে যায়। অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে এবং ঘোলের গুণগতমান যেন ঠিক থাকে, সে জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে কড়া নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে