তাছলিমা আকতার বেবী
উদ্যোক্তা, খাই-দাই
‘করোনাকালে মানুষ হোম ডেলিভারির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। আমার মেয়েরা তখন ঢাকায়। ওরাও অর্ডার করে খেত। এরপর ওরাই আমাকে বলে, তোমাকে একটা পেজ খুলে দিই।’ ‘খাই-দাই’ নামের ফেসবুক পেজটির শুরুটা এভাবেই হয়েছে বলে জানান তাছলিমা আকতার বেবী। রান্নার প্রতি ভালোবাসা আর মেয়েদের সহযোগিতা নিয়েই তিন বছর ধরে উত্তরবঙ্গের শহর রংপুরে সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করছেন তিনি। বিভিন্ন করপোরেট অফিস ও ব্যাংক থেকে খাবারের অর্ডার পায় তাছলিমার খাই-দাই। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুটি ব্যাংকে তিনি নিয়মিত দুপুরের খাবার সরবরাহ করেন। সাধারণ অর্ডারের বাইরে প্রতিবার রোজায় ইফতারের জন্য আলাদা খাবার তৈরি করেন তাছলিমা। এবার রোজার শুরুতেই বাড়িতে অর্ডারের পাশাপাশি তিনি পেয়েছেন একটি করপোরেট অফিসের ইফতারির অর্ডার। তাছলিমা জানান, তিনি এ পর্যন্ত এক জায়গা থেকে একবারে ২০০ জন মানুষের খাবারের দায়িত্বও পেয়েছেন। তাছলিমা বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, রংপুরের মতো ছোট শহরে হোম মেড খাবার কে আর অর্ডার করবে। তবে এই তিন বছরে আমি ভালো সাড়া পেয়েছি। ইচ্ছে আছে নিজের পরিচয়ে ছোট একটা রেস্টুরেন্ট খুলব।’
মারজান ইমু
উদ্যোক্তা, পিঠা পার্বণ
বন্ধু ও অফিস কলিগদের নিজের হাতে তৈরি পিঠা খাওয়াতেন মারজান ইমু। তাঁদের অনুপ্রেরণাতেই সংবাদকর্মী কাজের পাশাপাশি খাবার নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাই প্রথম দিকে বন্ধু ও কলিগ মহল থেকেই অর্ডার আসত বেশি। পিঠা ভালো বানান বলে ইমু প্রথমে পিঠা ও আমের আচার নিয়েই কাজ শুরু করেন। তবে তাঁর পেজ পিঠা পার্বণ আক্ষরিক অর্থে যাত্রা শুরু করে ২০১৭ সাল থেকে। এরপর ২০২০ সালে শুরু হয় মহামারি করোনা। সেখান থেকেই নতুন করে যাত্রা শুরু করেন ইমু।
মা ও গৃহপরিচারিকাকে নিয়ে ইমু খাবার বানিয়ে ডেলিভারি দিতেন রোগীদের জন্য। স্কুটি চালিয়ে ইমু নিজেই খাবার পৌঁছে দিতেন গন্তব্যে। এখনো এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি রমজান মাসে সপ্তাহে তিন দিন ইফতারির অর্ডার নেন। ইমু বলেন, ‘যেহেতু একটা চাকরি করি, তাই লিমিটেড অর্ডার নিই। তবে যতটুকু নিই, তাতে বেশ ভালোই সাড়া পাই।’ বাজার থেকে শুরু করে রান্না, নিজে হাতে যতটুকু পারেন করেন মারজান ইমু। তিনি বলেন, ‘একজন রোগী খাবার খেয়ে যখন তৃপ্তি পান, একজন রোজাদার ব্যক্তি যখন বলেন, একটা হেলদি ইফতার করলাম, এটাই উদ্যোক্তা হিসেবে বড় পাওয়া।’
আসমা হক কান্তা
উদ্যোক্তা, ধবল
২০০৮ সালে আসমা হক কান্তা শুরু করেন তাঁর উদ্যোক্তা জীবন। প্রথমে তিনজন মিলে একটি আইটি ফার্ম খোলেন। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে ২০১৫ সালে গরুর দুধ বিক্রি করা শুরু করেন। তাঁর ফেসবুক পেজের নাম দেন ধবল। তবে তাঁর কাজের মোড় ঘুরে যায় এক বছর পর। অনেক ভেবে কান্তা সিদ্ধান্ত নেন, খাবার নিয়েই কাজ করবেন। এর সঙ্গে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য আছে কৃষিজাত পণ্য নিয়ে কাজ করার। অভিজ্ঞতা থেকে কান্তা মনে করেন, রোজার ইফতারে বিভিন্ন ধরনের হিমায়িত খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়।
কান্তা বলেন, ‘উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছি অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে। জার্নিটা আসলেই অনেক বেশি কঠিন ছিল আমার জন্য। এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যেটা মানবিক দৃষ্টিতে তখন ঠিক বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসে দেখেছি, সেগুলো ছিল যুক্তিহীন।’ কান্তার মতে, জীবনে কষ্ট করতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে। সঙ্গে যুক্তি দিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে হবে। নিজের পেজটিকে ভবিষ্যতে একটি আউটলেটে রূপ দেওয়ার ইচ্ছা আছে এই উদ্যোক্তার। কান্তা জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য হলো এমন একটা পণ্যের চেইন তৈরি করা, যেখান থেকে থেকে কৃষিজাত পণ্য এবং দেশীয় ও ফিউশন খাবার ক্রেতার দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে