আছে বন, নদী, পাহাড়, সমুদ্র আর সমতল। তবে কোনো মরুভূমি নেই বাংলাদেশে। কিন্তু মরুভূমির প্রাণী দুম্বা পালনের চেষ্টা হচ্ছে এখানে। মো. জোবাইদুর রহমান (৪০) দুম্বা পালনের চেষ্টা শুরু করেছেন নিজের বাড়িতে। আর ‘পবিত্র নগরী’র এ পশু দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ভিড় করছেন তাঁর বাড়িতে।
জোবাইদুর রহমানের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হুড়াভায়া খাঁ গ্রামে। তিনি মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে।
সবার মতোই কৌতূহলী হয়ে একদিন উপস্থিত হই জোবায়দুরের বাড়িতে। তখন দুম্বার পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। কেটে দিচ্ছিলেন একটি দুম্বার বড় হয়ে যাওয়া লোম। কাজ করতে করতে কথা বলছিলেন তিনি। জানান, বিভিন্ন কারণে দুম্বা পালনের শুরুটা ছিল ‘ভয়ের’। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকেরা খুব একটা সহযোগিতা করেননি তাঁকে। অনেক চেষ্টা করে একবারই আনতে পেরেছিলেন সেখানকার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে। অনেকবার চেষ্টা করেও একটি পিপিআর ভ্যাকসিন নিতে পারেননি তিনি। একবার ফোড়া হয়েছিল দুম্বার। সেবারও অনেক চেষ্টা করে আনা যায়নি তাঁকে। পরে ইরাকে থাকা ছোট ভাই আর অন্য এলাকার এক চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা দেন দুম্বার।
তবে এখন দুম্বা পালনের সব ‘টেনশন’ কাটিয়ে উঠেছেন জোবাইদুর। তাদের জন্য বিশেষ ধরনের ঘর বানিয়েছেন। গরমে ফ্যান চলে সেখানে। ঠান্ডায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে সে ঘর গরম রাখেন। যাতে বেশি বাতাস না ঢোকে বা বৃষ্টির পানি না পড়ে, তার ব্যবস্থাও করা আছে। পানি, ঘাস, বুট ও অ্যাংকর ডালের ভুসি এবং খড় ছোট ছোট করে কেটে খাওয়ানো হয়।
তবে দুম্বার প্রিয় খাবার কাঁঠালপাতা। ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয় সেগুলোকে। ছয় মাস পরপর পশম কেটে দিতে হয়।
দুই ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে সংসার জোবাইদুর রহমানের। আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই। টুকটাক ব্যবসা করে সংসার চালান। ছোট ভাই মো. ফরিদুল ইসলাম ইরাকে থাকেন। তিনিও সেখানে দুম্বা পালন করেন। তাঁরই পরামর্শে গত কোরবানি ঈদের সময় ৪ লাখ টাকা দিয়ে পাবনা থেকে তিনটি দুম্বা কিনে আনেন জোবাইদুর। এগুলোর মধ্যে তুর্কি জাতের দুটি, অন্যটি ডরপর জাতের। ছয় মাসের মধ্যে একটি বাচ্চার জন্ম দেয় তুর্কি জাতের একটি দুম্বা। এখন চারটি দুম্বা জোবাইদুরের। মাসখানেকের মধ্যে আরও একটি বাচ্চা জন্ম নেবে। নিজের বাড়িতে দুম্বার সংখ্যা বাড়ায় বেশ খুশি জোবাইদুর। তিনি এখন স্বপ্ন দেখছেন নিজের দুম্বা দিয়ে একটি বড় বাণিজ্যিক খামার করার।
জোবাইদুর রহমানের একমাত্র মেয়ে জেসমিন আক্তার জুঁই (১৮) নিজেদের বাড়িতে দুম্বা পালন নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। জোবাইদুরের স্ত্রী চামেলি বেগম (৩২) বলেন, ‘আমাদের দেশে দুম্বা নেই। সে কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসে দেখতে। তাঁদের দেখতে সহযোগিতা করি। তাঁরাও খুশি হন।’
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জোবাইদুরের বাড়ি না গেলেও তাঁর দুম্বা পালনের বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। আশা করছেন জোবাইদুরের এ প্রচেষ্টা সফল হবে। এই প্রাণীটি পালনে একটি নতুন ‘আন্তপরিকল্পনা’ গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন বলে জানান নির্বাহী কর্মকর্তা।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে