শশীভূষণ দাশগুপ্ত নেপাল থেকে আরও কিছু চর্যাগান আবিষ্কার করেছিলেন। মনে হয়েছিল, সেগুলো হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত চর্যাগানের ধারাবাহিকতা। সে কথা যখন তিনি বললেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত এক সভায়, তখন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় খুবই প্রশংসা করলেন তাঁর। শশীভূষণ তাতে খুব খুশি হলেন। তাঁর চোখ চিকচিক করে উঠল।
সে সময় শঙ্খ ঘোষ একটা টেপ রেকর্ডার কিনেছেন। সেই চর্যাগানগুলোর কিছুটা তিনি রেকর্ড করে নিয়েছিলেন। সে কথা জানত তাঁর বন্ধু অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। সেই অলোকই একদিন বললেন, শান্তিদেব ঘোষ চর্যাগীতি শুনতে শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে আসতে চান।
কারণ আর কিছু নয়, তিনি বহুদিন ধরে কিছু সুরের খোঁজ করছেন। চর্যা যে গাওয়া হতো একদিন, সে তো তার রাগরাগিণীর উল্লেখ দেখেই বোঝা যায়। সবগুলো রাগ পরিচিত নয়। গানের সঙ্গে যে বাজনা বাজত, সেসব কেমন, এই গান থেকেই বাউলগান এসেছে কি না—এসব জানতেই একদিন শান্তিদেব ঘোষ চলে এলেন শঙ্খ ঘোষের বাড়ি। মন দিয়ে শুনলেন গানগুলো। মন ভরল কি না, বোঝা গেল না; তবে একেবারে অতৃপ্ত তিনি, সে কথা বলা যাবে না।
এবার যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন শান্তিদেব ঘোষ। শঙ্খ ঘোষের কিশোরী মেয়েটি তখন অলোকরঞ্জনের কানে কানে জিজ্ঞেস করল, ‘গান হবে না? গান গাইবেন না শান্তিদেব ঘোষ?’
শান্তিদেব ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কী বলছে ও?’
অলোকরঞ্জন বললেন, ‘জানতে চাইছে, আপনি কেন গাইছেন না?’
‘বলছে না তো কেউ। বললেই গাইব।’
অবাক হয়ে শঙ্খ ঘোষ বলেন, ‘গাইবেন?’
‘কেন গাইব না?’
একটু স্থির থেকে শান্তিদেব গাইতে থাকেন ‘বনে যদি ফুটল কুসুম’, ‘চপল তব নবীন আঁখি’, ‘পুষ্পবনে পুষ্প নাহি’ গানগুলো। একফাঁকে শঙ্খ ঘোষ বলেন, ‘গানগুলো কি টেপ করতে পারি?’
অনুমতি পেয়ে শান্তিদেবের দরাজ কণ্ঠটি শঙ্খ ঘোষ বন্দী করে ফেলেন তাঁর শব্দধারক যন্ত্রে।
সূত্র: শঙ্খ ঘোষের গদ্যসংগ্রহ, পৃষ্ঠা ৩৭৬-৩৮০
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে