আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান অস্থিরতা নিরসনে রাজনৈতিক সংলাপের উদ্যোগ আওয়ামী লীগ নিয়েছে কি না তা জানতে চেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আজ বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসভবনে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির কয়েকজন নেতা। সেখানেই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের কাছে জানতে চান রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীনেরা দেশটিকে জানিয়েছে বিগত দুটো জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে বিএনপির সঙ্গে তারা সংলাপ করেছিল। কিন্তু সংলাপ পরবর্তীতে দলটির অসহযোগিতার জন্য নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে জানান বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের দুজন নেতা। তাঁরা বলেন, পিটার হাসের আমন্ত্রণে তাঁরা মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে রাজনীতি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় আলোচনা হয়েছে। তবে বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা আলোচনায় ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের এক সদস্য বলেন, ‘বৈঠকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে এবং দলটির সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপ হয়েছে কি না পিটার হাস জানতে চান। তখন আমাদের সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁকে বলেন ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করেছিলেন। গতবারও বৈঠক হয়েছিল কিন্তু মাঝপথ থেকে তারা নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছে। নির্বাচন শেষ হতে দেয়নি এবং ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করেনি। কেউ যখন মাঝপথ থেকে উঠে যাবে তখন তো অন্যদল ফাঁকা মাঠেই গোল দেবে।’
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের সূত্র জানান, বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন যে, বিরোধী দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী।
জবাবে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তাদেরই আন্দোলনের ফসল। কিন্তু বিএনপি ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে। এর ফলেই এক/এগারোর মতো অনির্বাচিত সরকার এসেছে। এখন পাকিস্তান ছাড়া গণতান্ত্রিক বিশ্বে এ ধরনের সরকারের অস্তিত্ব নেই। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না, এটা পরিষ্কার। তবে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা জানান, ‘আমরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেছি বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে দাঁড় করিয়েছে। তারা আইনি ও আর্থিকভাবে পুরোপুরি স্বাধীন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে। এ ছাড়া অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো যে সুষ্ঠু হয়েছে, তা তুলে ধরা হয়।
সূত্র আরও জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই বেশি শুনতে চেয়েছে। তারা বলেছে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তারা প্রত্যাশা করে।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিএনপিও সম্প্রতি একাধিকবার মার্কিন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতারা একাধিকবার এসব বৈঠকের সমালোচনা করে ‘বিদেশিদের কাছে বিএনপির ধরনা’ দিচ্ছে বলে সমালোচনা করেন। এর মধ্যেই বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগেরও বৈঠক-সাক্ষাৎ বেড়েছে।
প্রতিনিধিদলে ওবায়দুল কাদের ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।
বুধবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়কের ভূত নামিয়ে ফেলুন, ওই ভূত আর বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না। আমেরিকান অ্যাম্বাসেডরকে বলে এসেছি, ইটস নট পসিবল টু রিটার্ন কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সো কলড এগেইন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইন্ডিয়ান অ্যাম্বাসিতে গিয়েছি, বিএনপির মতো মিডিয়া নিয়ে যাইনি, নীরবে গিয়েছি নিঃশব্দে চলে এসেছি। তারা (বিএনপি) সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে যায় রে যায়, কোথায় যায়! বারিধারা যায়, গুলশানে যায়।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে