রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম আস্বাভাবিক হারে বাড়লে ডিসিরা ব্যবস্থা নেবেন—এ রকম একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। আমরা শুধু রমজানে দ্রব্যমূল্য বিষয়ে কিছু কথা আলোচনা করব।
যেসব কারণে আমাদের দেশটাকে মাঝে মাঝে অদ্ভুত দেশ বলে মনে হয়, তার একটি হচ্ছে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, রমজান সংযমের মাস হলেও এ মাসে খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। সকাল আর দুপুরের নিয়মিত খাবার পরিবর্তিত হয়ে সন্ধ্যা ও শেষ রাতে এসে জায়গা করে নেয়। আর সে সময় খাবার গ্রহণের পরিমাণ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেকটা বেশি হয়। তার ওপর বাজার অর্থনীতি এসে ইফতার ও সাহ্রিকে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে পরিণত করেছে। পত্রপত্রিকার ফিচার পাতাগুলোয়ও বিভিন্ন রেস্তোরাঁর লোভনীয় খাবারের বিজ্ঞাপনসহ ইফতার-সাহ্রির প্রচার করতে দেখা যায়। সেসব আয়োজনে এত বেশিসংখ্যক মানুষ ভিড় জমান যে তাতে অনেকের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোড়নও তৈরি হয়। কিন্তু এই পুরো মার্কেটিং ব্যাপারটা সংযমের সঙ্গে যায় না। রমজান মাসের মূল ভাবনার সঙ্গে তা সাংঘর্ষিক।
ইফতার পার্টির রেওয়াজটাও পোক্ত হয়ে উঠেছে। এই ইফতার পার্টির নামে কত কোটি টাকা খরচ হয়, সে প্রশ্ন এখানে তোলা হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত ইত্যাদি সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই এখন ইফতার পার্টি হয়ে উঠেছে প্রেস্টিজ ইস্যু। সংযম বিষয়টিকে এসব পার্টি কতটা অসংযমী করে তুলেছে, সে আলোচনায় যাচ্ছি না; বরং বলতে চাই, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যদি দেশের অর্থনীতি কিছুটা চাঙা হয়ে ওঠে, তাহলে দোষ কী? হ্যাঁ, দোষ একেবারেই নেই, তা নয়। এই সব বড় বড় পার্টি আর রেস্তোরাঁয় ভূরিভোজের আয়োজনগুলো অর্থনীতির নিয়ম মেনে চললে সমস্যা ছিল না। দোষ হলো, চাহিদা এবং জোগানের অর্থনৈতিক সূত্র মেনে নিয়ে এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটে না। ব্যবসায়ী নামের একশ্রেণির সিন্ডিকেট কারবারি কৃত্রিমভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে—এ কথা দিনের পর দিন আমজনতাসহ সবাই জেনে এসেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া হয়েছে, যার সুবাদে এই অসংযমী সিন্ডিকেটের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার প্রবণতায় ছেদ ঘটেছে?
এই সিন্ডিকেটকে ঠেকানোর একটা উপায় আছে। আর তা হলো, জনমানুষের অধিকারের প্রশ্নে প্রশাসনের হার্দিক অবস্থান, তাদের আন্তরিকতা। যদি সত্যিই এবারের রমজান মাসে অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য না বাড়ে, তাহলে তাকে এই সময়ের বাস্তবতায় অস্বাভাবিক একটি ঘটনা বলে মেনে নিতে হবে। এবং সেই অস্বাভাবিক ঘটনা বারবার ঘটতে থাকলে আমাদের অর্থনীতির চাকা যেমন ঠিকভাবে ঘুরবে, তেমনি সেটা এসে সাধারণ মানুষের বুকের ওপর দিয়ে যাবে না। সব দিকেই সংযম শব্দটা একটা অর্থ নিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।
আমরা বরং রমজানের প্রথম দিনে বেগুনের দামের দিকে একটু খেয়াল রাখি। বেগুনের পাশাপাশি অন্য পণ্যদ্রব্যের হালচালও তাতে বুঝে নেওয়া যাবে।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে