যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেই সময় পত্রিকার সাংবাদিকেরা যে বেতন পেতেন, সেটা শুনলে এখনকার লোকেরা লজ্জায় মাটিতে মিশে যাবে। আহমেদুর রহমান ছিলেন ইত্তেফাকের ডাকসাইটে সাংবাদিক। তাঁর মিঠেকড়া কলামের লেখাগুলো মানুষের মনে আলোড়ন তুলত। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আজাদের
সঙ্গে ইত্তেফাকের যে লেখালেখির যুদ্ধ হয়েছিল, তাতে সুযুক্তি প্রয়োগ করা অনেকগুলো লেখা লিখেছিলেন আহমেদুর রহমান।
রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী সূত্রেই গড়ে উঠল ছায়ানট। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত থাকলেন আহমেদুর রহমান। ১৯৬৪ সালে যখন দাঙ্গা হলো, তার আগেই পারিবারিক সিদ্ধান্তের কারণে বিয়ে করলেন তিনি। বলা যায়, বিয়ে করতে বাধ্য হলেন। চালচুলোহীন একজন মানুষ বিয়ে করতে গেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তারপর এক শীতের ভোরে সাদা খদ্দরের চাদর জড়িয়ে এসে হাজির হলেন ঢাকায় এবং জানালেন, পরের ট্রেনে বউ এসে পৌঁছাবে।
বন্ধুরা উৎসুক হলেন, ‘তা বউভাত হবে না?’‘না।’ আহমেদুর রহমানের উত্তর।
কে শোনে কার কথা? ছায়ানটের কয়েকজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের কাছে সে খবর পৌঁছানোর পর গোপীবাগের বেড়ার ঘরে ঝাঁট পড়ল। তৈরি হলো লুচি আর তরকারি। হয়ে গেল বধূবরণ।
১৯৬৪ সালের দাঙ্গার সময় প্রেসক্লাব থেকে যে শান্তি মিছিল বেরিয়েছিল, তারও পুরোভাগে ছিলেন আহমেদুর রহমান। মিছিল যখন র্যানকিং স্ট্রিটে পৌঁছেছে, তখন দু-একজন এসে বলল, ‘উধার মৎ যাও, উধার কাম হো রাহা।’ কী ‘কাম’ হচ্ছে, তা বোঝা গেল কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর। মানিক ঘোষের বাড়িতে আশ্রিত হিন্দুদের খুন করার জন্য দরজা-জানালা ভাঙছে বিহারিরা। মিছিল সেখানে পৌঁছানোর পর দাঙ্গাবাজেরা পালাল আর এই আশ্রিত হিন্দুদের জায়গা হলো ৩১ নম্বর র্যানকিং স্ট্রিটে মোখলেসুর রহমান সিধু ভাইয়ের বাড়িতে।
যে স্বেচ্ছাসেবক দলটি পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছিল, তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আহমেদুর রহমান।
সূত্র: সন্জীদা খাতুন, স্মৃতিপটে গুণীজন, পৃষ্ঠা ৬৮-৭০
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে