Alexa
রোববার, ০২ এপ্রিল ২০২৩

সেকশন

epaper
 

চিকিৎসক না হয়ে স্থপতি

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩২

স্থপতি নাজলী হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

‘স্থপতি’ শব্দটি প্রথম শুনেছিলেন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়। ক্লাসের এক শিক্ষার্থী স্থপতি হওয়ার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। সেই স্বপ্ন কীভাবে যেন নাজলী হোসেনকেও পেয়ে বসে। তাই চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিংবা বিজ্ঞানী না হয়ে তিনি বনে যান স্থপতি। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন মন্টি বৈষ্ণব।

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করার প্রায় এক যুগ পর নাজলী হোসেন জায়গা করে নেন এশিয়ার শীর্ষ ১০ নারী স্থপতির তালিকায়! সম্প্রতি ভারতীয় ম্যাগাজিন ‘উইমেন অন্ট্রাপ্রেনিউর ইন্ডিয়া’ তাঁকে এই সম্মাননা দেয়। নাজলী কাজ করেন পরিবেশবান্ধব ভবন নিয়ে। ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের স্থপতি তিনি।

যা ছিল ভাবনার বাইরে
এশিয়ার শীর্ষ ১০ নারী স্থপতির একজন তিনি—এই সংবাদে বেশ অবিশ্বাস ছিল নাজলী হোসেনের। ‘উইমেন অন্ট্রাপ্রেনিউর ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবার ফোন এবং ই-মেইলে যোগাযোগ করা হয়। ই-মেইলের উত্তর দেওয়ার পর তিনি জানতে পারেন, একটি প্যানেলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবছর পেশাজীবী নারীদের টপ টেন অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ বছর স্থাপত্যবিদ্যায় টপ টেনের একজন হয়েছেন নাজলী হোসেন।

স্থপতি হলেন যেভাবে
নাজলী ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন সাদা অ্যাপ্রোন পরে মেডিকেল কলেজে পড়তে যাচ্ছেন। স্বপ্নের মতো করে নিজেকে তৈরিও করেন। ফলে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল না তাঁর। বলা যায়, মা-বাবার কারণে তিনি বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে বাধ্য হন। তাঁরা পরীক্ষার ১৫ দিন আগে ঘরবন্দী করে রেখে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বাধ্য করেন নাজলীকে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে মেডিকেলের সব বইপত্রও নিয়ে যান বাবা-মা। মোট কথা, ওই ১৫ দিন বুয়েটের জন্য প্রস্তুতি নেন নাজলী। পরীক্ষায় পাস করে বুয়েটে ভর্তি হবেন, নাজলী নিজেও তা চিন্তা করেননি। কিন্তু তা-ই হয়েছে। ফলে মেডিকেলে পরীক্ষা বাদ দিয়ে তিনি ভর্তি হন বুয়েটে। 

কেমন হবে স্থাপনা
যেকোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নাজলীর মূল উদ্দেশ্য থাকে পরিবেশের ক্ষতি না করে নিরাপদ স্থাপনা নির্মাণ করা। পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নাজলীর অভিজ্ঞতা একেবারে ব্যবহারিক। তিনি মনে করেন, এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণে দক্ষ কারিগরের অভাব আছে দেশে। ভবনমালিকেরাও পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ করতে চান না। কিন্তু স্থপতি হিসেবে এমন ভবনের গুরুত্বের কারণে তিনি সব সময় এর পক্ষে থাকেন। ভবনমালিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, পরামর্শ দিয়ে থাকেন পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণের। এখন অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে ডাকা হয় শিক্ষার্থীদের বিষয়টি শেখানোর জন্য। নাজলী মনে করেন, হয়তো ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হবে পরের প্রজন্ম।

‘উইমেন অন্ট্রাপ্রেনিউর ইন্ডিয়া’তে  নাজলী হোসেনের সফলতার গল্প। ছবি: সংগৃহীত পরিবেশবান্ধব ভবন
বর্তমান বিশ্বে বায়ুদূষণে প্রথম স্থানে আছে ঢাকা। এই দূষণের বেশির ভাগ হয় বিভিন্ন স্থাপনার কারণে। অভিজ্ঞতা থেকে নাজলী মনে করেন, স্থপতিরাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। তিনি বিশ্বাস করেন, পরিবেশবান্ধব মানে একলা কিছু করা নয়। সবাই মিলে ক্ষতিকর উপাদান থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা। এমনভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা উচিত, যাতে মাটি, পানি, বায়ু দূষিত না হয়। এ জন্য কিছু কাজ করা উচিত বলে মনে করেন নাজলী।

  • পরিবেশের ক্ষতি এড়াতে নির্মাণকাজের বালুর ট্রাক ত্রিপল দিয়ে ঢেকে আনতে হবে।
  • নির্মাণকাজের জন্য মাটি তোলার সময় ওপরের উর্বর মাটি সংরক্ষণ করে পরবর্তীকালে অন্য কাজে ব্যবহার করতে হবে।
  • বৃষ্টির পানি যতভাবে ব্যবহার করা সম্ভব, সেটা করতে হবে। যেমন বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে টয়লেটের ফ্লাশ ট্যাংকে ব্যবহার করা, পরিশোধন করে মেঝে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং বাগানের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • নষ্ট বাল্ব ফেলে না দিয়ে সংগ্রহ করে বিক্রি করে দেওয়া যেতে পারে। এতে বাল্বের রাসায়নিকের হাত থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ।
  • দৈনদিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে হবে।
  • ভবন তৈরির সময় প্রাকৃতিক আলো যাতে বেশি ব্যবহার করা যায়, সেভাবে ভবনের নকশা করতে হবে। এতে বিদ্যুতের ব্যবহার কম হবে। 

লড়াইটা সহজ ছিল না
প্রায় এক দশকে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ভরে উঠেছে নাজলী হোসেনের। কাজের পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা যে নারীর অনুকূলে নয়, সে বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তিনি। পারিপার্শ্বিকতার কারণে যেখানে আমাদের দেশের নারীরা তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেন না, সেখানে বিদেশি সম্মাননার স্বপ্ন দেখাটা একটু কঠিন বৈকি। সেটা মানেনও নাজলী। একজন নারীকে অনেক যুদ্ধ করতে হয় এগিয়ে যাওয়ার জন্য। সেটা তাঁকেও করতে হয়েছে। অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুলে নাজলী বললেন, ‘আমরা যখন একটা প্রজেক্টের কাজ শুরু করি, তখন অনেক সেক্টরের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে হয়। সেই সময় প্রতিদিন, প্রতিটি পদক্ষেপে আমাকে প্রমাণ করতে হয়—আমি পারি। এ সময়টাই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। বলতে পারেন, এটা আমাদের চলমান লড়াই। আমার তো মনে হয়, স্থপতিদের মতো প্রতি সেক্টরের নারীই এই সংগ্রাম করেন।’

তবু স্বপ্ন
মানুষের বাঁচার জন্য খাদ্যের মতো প্রয়োজন বাসযোগ্য পরিবেশ। নাজলী জানান, নিজেকে নিয়ে তাঁর খুব বেশি স্বপ্ন নেই। পরিবেশবান্ধব ভাবনা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান—এটাই এই মুহূর্তে তাঁর একমাত্র স্বপ্ন।

মন্তব্য

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।
Show
 
    সব মন্তব্য

    ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

    এলাকার খবর

     
     

    স্বাদ বদলে টমেটো দিয়ে নোনা ইলিশ ভুনা

    ৮১ দেশে অপু

    ভ্রমণ

    কালিম্পংয়ে দেখার আছে অনেক কিছু

    ভ্রমণের আগেই যে পরিকল্পনা করবেন

    কিংবদন্তির কনকর্ড

    ইফতারিতে নবাবি খাবার দইবড়া, বানিয়ে ফেলুন ঘরেই

    ‘আবাসিকতার কাহিনি বাদ, যা বলব তাই হবে’, ছাত্রলীগকর্মীর হুমকি

    সাপ্লাই চেইন লজিস্টিক ব্যয় কমাতে কাজ করবেন প্রফেশনালেরা

    হারল্যানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন বিদ্যা সিনহা মিম

    কাউকে সস্তা রাজনীতি করতে দেব না: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

    কাপ্তাইয়ে ২১৭ লিটার চোলাইমদসহ আটক ১

    রেলক্রসিংয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের চিৎকারে রক্ষা পেল প্রাণ