Alexa
বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

সেকশন

epaper
 

৩০০ বছরের জামাই মেলা

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৩

ঘিওরের জামাই মেলা থেকে মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন একজন। ছবি: আজকের পত্রিকা মাছের আকার দেখলে ভিরমি খেতে হয়! স্থানীয় স্কুলমাঠে বসেছে মেলা। তারই এক পাশে সারি সারি মাছের দোকান। সেগুলোতে আছে বাগাড়, আইড়, বোয়াল, কাতল, পাঙাশ, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, চিতলসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। নধর কান্তি সেসব মাছের ওজন ৫ থেকে ২০ কেজি বা তারও বেশি। কিনছেন কারা? 

গল্পটি এখানেই অনন্য। এ মেলার মূল চরিত্র ‘জামাই’ সম্পর্কের মানুষটি। আর মূল আকর্ষণ, তাঁদের হাতে বিশাল বিশাল মাছ। মেলার সময় আশপাশের গ্রামগুলোতে মেয়ে আর জামাইকে দাওয়াত করে আনা হয়। জামাতারা মেলা থেকে বড় বড় মাছ কেনেন শ্বশুরবাড়ির জন্য। এটা এখানকার দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতি। এ কারণে মেলাটিকে ‘জামাই মেলা’ বলা হয়। এরপর শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে জামাতাদের দেওয়া হয় গরু, মহিষ, আসবাব, স্বর্ণালংকার ইত্যাদির মতো উপহারসামগ্রী। যে জামাই যত বড় মাছ কিনবেন, তাঁর কদর তত বেশি, প্রচলিত প্রথা এমন না হলেও বড় মাছ কিনে জামাইদের বুকের ছাতি যে টান টান হয় না, তা নয়। তাতে ভালোবাসা বাড়ে, কদরও বাড়ে নিশ্চয়।

প্রচলিত গল্প আর কিংবদন্তির ওপর ভিত্তি করে ঘিওর এলাকার মানুষ মনে করেন, মেলাটির বয়স ৩০০ বছর বা তার বেশি। অনুষ্ঠিত হয় প্রতি দোলপূর্ণিমা তিথিতে। প্রাচীন এ মেলা এখন চলে দুই দিন। স্থানীয় স্কুলমাঠে এবারের মেলা বসেছে গতকাল মঙ্গলবার, শেষ হবে আজ। এর আয়োজক মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের বাঙ্গালা মুক্তা সংঘ। এটি স্থানীয়ভাবে বউ মেলা, বাঙ্গালা মেলা বা মাছের মেলা নামেও পরিচিত।

দুই দিনের এ মেলার দ্বিতীয় দিন বসে বউ মেলা। এদিন এলাকার নববধূ ও বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা নতুন বিবাহিত মেয়েরা মেলায় আসেন। সুদীর্ঘকালের চর্চায় এগুলো এখন ঘিওরের সংস্কৃতির অংশ। ডা. গণি-সাহেরা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলালচন্দ্র সরকার তেমনটিই মনে করেন। কথায় কথায় তিনি বললেন, এটি কেবল একটি মেলা নয়, সুদীর্ঘ ইতিহাস। বংশপরম্পরায় তা চলে আসছে। এ কথাই যেন প্রতিধ্বনিত হলো সাবেক ইউপি সদস্য চাঁন মিয়ার কণ্ঠে। তিনি জানালেন, তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১২ বছর আগে। নিয়ম করে প্রতিবছর তিনি মেলার সময় মেয়ে ও জামাতাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসেন, তাঁদের উপহার দেন। এ বছর তিনি উপহার হিসেবে কিনেছেন একটি গরু।

মেলায় স্ত্রী ও শ্যালিকাদের নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন এলাকার প্রবীণ জামাতা আবদুস সাত্তার। প্রায় ৬০ বছর বয়সের সাত্তার জানালেন, তিনি ৪০ বছর আগে বিয়ে করেছেন বাঙ্গালা গ্রামে। তখন থেকে মেলায় আসছেন নিয়ম করে। ঐতিহ্যগতভাবে শুধু যে জামাইরা এ মেলায় আসেন, তা নয়। হারান পালের মতো মানুষেরাও এখানে পরম্পরার সাক্ষী। তাঁর বাবা ও দাদা এ মেলায় মাটির বাসনপত্রের ব্যবসা করেছেন এককালে। তৃতীয় প্রজন্মের হারান এখন আসেন মেলায়। 

মাছের মতোই ঘিওরের এ জামাই মেলায় পাওয়া যায় বাঁশ-বেত-কাঠের আসবাব থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় উপকরণ। আছে বছরান্তের গ্রামীণ বিনোদনের জন্য সার্কাস, নাগরদোলা, লোকসংগীতের আয়োজন, নানা ধরনের মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য।  মেলার অন্যতম আকর্ষণ ঘোড়দৌড়। এতে অংশ নেয় প্রায় অর্ধশত ঘোড়া। বিভিন্ন ইভেন্টের জন্য থাকে পুরস্কার।

মন্তব্য

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।
Show
 
    সব মন্তব্য

    ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

    এলাকার খবর

     
     

    আ.লীগে প্রার্থীজট, নির্ভার বিএনপি

    ভোটের মাঠে

    শেরপুর-২: মতিয়ার আসনে নির্ভার আ.লীগ

    শিক্ষকদের হাতে লাঞ্ছিত ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, নিয়োগ স্থগিত

    ধূমপায়ীর হারে বিশ্বে অষ্টম বাংলাদেশ: জরিপ

    পাঁচ পুরুষের ভিটেয়

    ভোটের মাঠে

    মুন্সিগঞ্জ-২: বিএনপির ঘাঁটিতে রাজত্ব আ.লীগের

    স্বর্ণের দাম এক লাফে সাড়ে ৭ হাজার টাকা বাড়ানোর পর কমল ১১০০

    ভাস্কর শামীম শিকদার আর নেই

    ১২ দফা নিয়ে আলোচনার আশ্বাস

    র‍্যাপার ব্যাড বানির বিরুদ্ধে ৪০ মিলিয়ন ডলারের মামলা করল তাঁর প্রাক্তন

    সিঙ্গারের ফ্রি এসি ক্লিনিং সার্ভিস আবারও চালু 

    বাঁশখালীতে হরিণ শিকারের পর জবাই, ৫ জনের কারাদণ্ড