সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের তিন গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এতে ৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে তা সোহরাওয়ার্দী, শাহ আমানত ও শাহজালাল হলে ছড়িয়ে পরে। সংঘর্ষ থেমে থেমে ভোর পর্যন্ত চলে। এ সময় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বিবাদমান গ্রুপগুলো হলো সিক্সটি নাইন, সিএফসি ও বিজয়। এদের মধ্যে সিক্সটি নাইন গ্রুপ সাবেক সিটি মেয়র আ. জ. ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। অন্যদিকে সিএফসি ও বিজয় গ্রুপ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনের একটি চায়ের দোকানে বসে ধুমপান করছিলেন সিক্সটি নাইন গ্রুপের এক কর্মী। পাশের একটি টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন বিজয় ও সিএফসি গ্রুপের কয়েকজন কর্মী। এ সময় সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মী ধোঁয়া ছাড়লে সিএফসির এক কর্মী প্রতিবাদ করেন। তিনি তার শিক্ষাবর্ষ জানতে চান। পরে সিক্সটি নাইনের ওই কর্মী নিজেকে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলে সিএফসির কর্মী তাঁর ওপর চড়াও হন। জুনিয়র হয়ে কেন এভাবে প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন এসব নিয়ে তর্কাতর্কিতে জড়ান। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিক্সটি নাইন গ্রুপের সঙ্গে সিএফসি ও বিজয় যৌথভাবে সংঘর্ষ শুরু করে। এ সময় সিক্সটি নাইনের কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে ও ভিতরে, সিএফসি কর্মীরা শাহ আমানতের ভেতরে এবং বিজয়ের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী মোড়ে অবস্থান নেয়।
তিন গ্রুপের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এ সমহ দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা যায় গ্রুপগুলোর নেতাকর্মীদের।
পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি রাত পৌনে ১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে রাত সাড়ে চারটার দিকে ফের সংঘর্ষে জড়ায় তিন পক্ষ। সোয়া পাঁচটায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাতে আমাদের এখানে ৭ জন চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাদের শরীরে ইট-পাথরের আঘাত ছিল। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।
সিএফসি গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদাফ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে আমাদের এক কর্মীকে স্টেশনতলায় (চায়ের দোকান) সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মীরা মারধর করে। পরবর্তীতে সিক্সটি নাইনের কর্মীরা বিজয় গ্রুপের সঙ্গেও সংঘর্ষ হয়। আমরা আমাদের ছেলেদের হলে ঢুকিয়ে দিই। কিন্তু ভোরে সিক্সটি নাইনের কর্মীরা আমাদের কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা করে।’
বিজয় গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম সবুজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের ছেলেরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের ছেলেদের সঙ্গে ঝামেলা করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জুনিয়রদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। নিরাপত্তা জোরদার করতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হবে।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে