স্কুল ভবন আছে, শ্রেণিকক্ষ আছে, বেঞ্চ আছে, ব্ল্যাকবোর্ড আছে, শিক্ষকও আছেন। নেই শুধু শিক্ষার্থী বা ছাত্রছাত্রী। কোনো নির্দিষ্ট দিনে, বিশেষ কোনো কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে উপস্থিত হতে পারেনি, ব্যাপারটা তা-ও নয়। ব্যাপার হলো একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে একজনও ছাত্রছাত্রী নেই। স্বাভাবিকভাবে নেই শিক্ষার্থী হাজিরা খাতাও। অস্বাভাবিক ব্যাপার সন্দেহ নেই, কিন্তু ঘটনা সত্য।
২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল। প্রায় পাঁচ বছর ধরে একটি স্কুলে একজনও শিক্ষার্থী নেই, তবু স্কুলটি চালু আছে, স্কুলের শিক্ষকেরা হয়তো নিয়মিত বেতনও পাচ্ছেন। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকারি বরাদ্দের টাকাও আসে, কিন্তু আসল যেটা না থাকলে স্কুলটি চালু থাকার কথা নয়, অথচ সেই ছাত্রছাত্রী না থাকার পরও স্কুলটি বছরের পর বছর চলছে। কীভাবে?
বাংলাদেশকে বলা হয় সব সম্ভবের দেশ। আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী ইউনিয়নের কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোনো শিক্ষার্থী নেই। নিয়মানুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয়টি শ্রেণিতে সর্বনিম্ন ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। কিন্তু কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীও নেই। ২০১৮ সাল থেকেই বিদ্যালয়টিতে কোনো ছাত্রছাত্রী না থাকলেও বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য শিক্ষক রয়েছেন পাঁচজন। শিক্ষার্থী নেই বলে তাঁরাও নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না।
খবর থেকে জানা যাচ্ছে, বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য কোনো নির্দেশক সাইনবোর্ড নেই, নেই কক্ষ নির্দেশক কোনো লেখা। শ্রেণিকক্ষে বোর্ড, বেঞ্চগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। প্রাক্-প্রাথমিকের কক্ষটিতে শুধু একটি খেলনা রাখা আছে। অফিস কক্ষের ভেতরে শিক্ষকদের নামের তালিকার বোর্ডে কর্মকর্তাদের তথ্য সংযুক্ত নেই। বেঞ্চের ওপর রাখা বঙ্গবন্ধু কর্নারে ধুলোর আস্তর পড়েছে, সঙ্গে রাখা টয়লেট ক্লিনার। শেখ রাসেল স্মৃতি কর্নারে রাখা স্যাভলন, স্যানিটাইজার, গ্লাসসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। আর ওপরে রাখা গতবারের অবিতরণকৃত পাঠ্যবই। গতবারের বই এখনো বিতরণ করেননি কেন—জানতে চাইলে একজন শিক্ষক বলেছেন, ‘ছাত্রছাত্রীই নাই, বই কাকে দেব?’ তাই তো, বই তো শিক্ষার্থীদের জন্যই।
প্রশ্ন হলো, স্থানীয় অধিবাসীরা কি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখান না? আজকাল কেউ সন্তানদের পড়াশোনা না করিয়ে থাকেন না। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তেমন পড়াশোনা করানো হয় না, তাই তাঁরা নিজ নিজ ছেলেমেয়েদের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করে দেন।
প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষক এবং বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি কমিটি থাকার পরও কেন এত বছর ধরে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আদায় করা দরকার।
কাজীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বিদ্যালয়টির ব্যাপারে এর আগেও অভিযোগ পেয়েছিলাম। এবার আর ছাড় দেওয়া হবে না। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আগে অভিযোগ পেয়েও কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তার জবাবও এই শিক্ষা কর্মকর্তার দেওয়া উচিত। জবাবদিহি না থাকায় অব্যবস্থা এখন সর্বগ্রাসী রূপ নিচ্ছে।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে