মাদক যে একটা তরতাজা জীবন নষ্ট করে দিতে পারে এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি এখনো—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই মাদকাসক্ত এক শিক্ষার্থী দায়ের আঘাত নিজের গলাতেই বসিয়েছিলেন, খুন করেছিলেন নিজেকে। মাদকের ভয়াবহতার এটা একটা মাত্র উদাহরণ। তবু মাদক ব্যবসা আর সেবন থেমে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর মাঝে। এমন অভিযোগ নিয়েই আজকের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে প্রতিবেদন।
নিয়মিত ছিনতাই ও হয়রানির ঘটনা ঘটছে ঢাবির ক্যাম্পাস, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায়। অভিযোগের আঙুল যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের গণরুমের কতিপয় শিক্ষার্থীর দিকে। এই শিক্ষার্থীরা মেসেঞ্জার-হোয়াটসঅ্যাপ-ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করেন। সেই গ্রুপেই হয় পরিকল্পনা—রাতে ঘোরাঘুরি, আড্ডা, মাদক গ্রহণ, হেনস্তা, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম।
শাহবাগ থানার সূত্রমতে, জানুয়ারিতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শহীদ মিনার এলাকায় ঘটে যাওয়া হেনস্তা ও ছিনতাইয়ের ১৩টি অভিযোগ জমা পড়ে। এ ব্যাপারে পুলিশের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি বলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
একটা শিক্ষাঙ্গনে মাদক ব্যবসা, মাদক গ্রহণ, ছিনতাই ও হয়রানির ঘটনা কেন ঘটেই চলছে নিয়মিত, সে ব্যাপারে কতটুকু কে ভাবেন, সে প্রসঙ্গ থাক। একজন শিক্ষার্থীর পরিবার কতটা ভাবে, সেটা বেশ জরুরি। কারণ পারিবারিক বন্ধন মজবুত না হলে একজন শিক্ষার্থীর জন্য বিপথ বেছে নেওয়া খুব সহজ। পরিবারে মা-বাবা এবং অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে যতটা সরল সম্পর্ক থাকবে একজন শিক্ষার্থীর, ততটাই তিনি তাঁদের সঙ্গে সব ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করতে পারবেন; পরিবার থেকে যে মূল্যবোধ-আদর্শের শিক্ষা পাবেন, নিজের জীবনটাকে ওই অনুযায়ী গোছাতে পারবেন। তাই গুরুদায়িত্বটা পরিবারকেই নিতে হবে। এরপর শিক্ষকেরা ক্লাস ও তার বাইরেও শিক্ষার্থীদের সেই মূল্যবোধ-আদর্শের চর্চায় উৎসাহ দিতে থাকবেন।
এ কথাগুলো কারও অজানা নয়। তবু বারবার বলতে হয় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে ঘটে বলে। বর্তমানকালে আদর্শের শিক্ষায় ফাঁকটা কোথায়, তা খুঁজে বের করা খুব জরুরি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তো পড়াশোনাই করতে যান। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থীর অপকর্মের কারণে বাকি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তায় পড়াটা স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যতই অভিযান পরিচালনা করুক না কেন, অভিযোগের পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলুক না কেন, শিক্ষাঙ্গনের এই অসুখ দূর করতে যে আরও বেশি কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, তা কিন্তু স্পষ্ট।
‘ব্রেকিং ব্যাড’ নামের টিভি সিরিজটি বেশ জনপ্রিয়, দেখা যায় নেটফ্লিক্সেও। মাদকের ব্যবসা মানুষকে কীভাবে ধাপে ধাপে অপরাধের ভয়ানক জগতে নিয়ে যায় আর কীভাবে এক নিমেষেই সবকিছু তছনছ করে দিতে পারে, তার দারুণ উদাহরণ সিরিজের গল্পটি। সঙ্গে এই উদাহরণটাও আছে—চাইলেই মাদকাসক্ত যেকোনো ব্যক্তি নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে। শুধু দরকার একটু ভালোবাসা। সে জন্য দরকার পরিবার আর শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রয়াস। সিরিজটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন একজন শিক্ষার্থীর জীবনে পরিবার আর শিক্ষকের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে