সাংবাদিক সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত ফিরে যাচ্ছেন কলকাতায়। তার আগে আব্বাসউদ্দীন আহমদের পুত্র মুস্তাফা জামান আব্বাসী এলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। হাতের বাদামি রঙের লম্বা খামটি সুখরঞ্জনের হাতে দিয়ে বললেন, ‘দাদা, এটা ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের কলকাতা অফিসে পৌঁছে দিতে হবে।’
খামের ওপর প্রাপকের নাম: শ্রীমতী প্রতিমা দাশগুপ্ত।
সুখরঞ্জন বললেন, ‘নামটা চেনা চেনা লাগছে। পৌঁছে দেব। কিন্তু তোমাকে এই চিঠি কে দিয়েছেন?’
‘মামু।’ আব্বাসীর উত্তর।
‘মামুটি কে?’
এবার আব্বাসী যে উত্তর দিলেন, তাতে সুখরঞ্জনের হৃদয়তন্ত্রীতে হাজারটা কাসর ঘণ্টা বেজে উঠল। সৈয়দ মুজতবা আলী! সুখরঞ্জন জানতে পারলেন, আব্বাসীর স্ত্রী আসমা আব্বাসীর মামা হলেন সৈয়দ মুজতবা আলী।
আর বিলম্ব নয়। কোনোমতে খুব দ্রুত শরীরে শার্ট গলিয়ে রিকশায় করে ধানমন্ডির পথে। আব্বাসী গাড়ি আনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সুখরঞ্জনের তর সইছিল না।
ইজি চেয়ারে বসে আছেন মুজতবা আলী। সুখরঞ্জন সোজা গিয়ে তাঁর পায়ের কাছে বসে পড়লেন। ১৯৬০ সালের পর তিনি সৈয়দ মুজতবা আলীকে প্রথম দেখলেন।
মিসেস আলী বের হচ্ছিলেন। সুখরঞ্জনকে মাটিতে বসে থাকতে দেখে তিনি বললেন, ‘এ কী দেখি, মেহমানকে মাটিতে বসিয়ে…!’
মুজতবা আলী বিনা ভ্রুক্ষেপে বললেন, ‘এই ব্যাটা কত বড় মেহমান, তা তোমার চেয়ে আমি ভালো জানি।’
এরপর সুখরঞ্জন চেয়ারে বসে বললেন, ‘আচ্ছা, আপনি কি আব্বাসীকে দিয়ে ওই চিঠিটা পাঠিয়ে আমাকে টেস্ট করতে চাইলেন? আমি প্রতিমাদিকে চিনতাম। তখন তিনি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসে গ্রাউন্ড হোস্টেস ছিলেন।’
মুজতবা আলী বললেন, ‘ব্যাটা, তুই জল দিয়ে খামটা খুলে চিঠি পড়িসনি তো?’
সুখরঞ্জন বললেন, ‘খুলতাম, যদি খামের ওপর বসন্তমঞ্জরীর নাম থাকত!’
বসন্তমঞ্জরী? হ্যাঁ, বহু আগে কটক শহরে মুজতবা আলী যখন অল ইন্ডিয়া রেডিওর স্টেশন ডিরেক্টর ছিলেন, তখন ওডিশার রাজপরিবার থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন বসন্তমঞ্জরী। যোগ দিয়েছিলেন রাজনীতিতে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর হ্যাঁ, তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন মুজতবা আলীর হৃদয়ের কাছে। কটকের খবরের কাগজে তা নিয়ে লেখালেখিও হয়েছিল বিস্তর!
সূত্র: সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত, ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয়, পৃষ্ঠা ৩৮৫-৩৮৬
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে