নাকের পলিপ আমাদের কাছে পলিপাস নামে পরিচিত। এটি খুব সাধারণ একটি রোগ। নাকের পলিপ হলো দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জির ফল। নাকে যদি অ্যালার্জি বা সংক্রমণ হয়, তখন নাকের ভেতরে যে ঝিল্লি আছে, যেটাকে আমরা মিউকাস মেমব্রেন বলি, তাতে পানি জমে ফুলে অনেকটা আঙুর ফলের মতো হয়ে যায়। এটিই নাকের পলিপ।
নাকের পাশে মাংসপিণ্ড রয়েছে তিনটি। একটিকে বলে ইনফেরিয়র টার্বিনেট, অন্য দুটিকে মিডেল টার্বিনেট ও সুপিরিয়র টার্বিনেট বলে। ইনফেরিয়র টার্বিনেট দুই পাশে বড়। একে পলিপ বলে বিভিন্ন ভুল চিকিৎসা করা হয়। আসলে এটি নাকের স্বাভাবিক অংশ।
লক্ষণ
নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি আসা, নাকের অ্যালার্জি, মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা, নাক ডাকা, কানব্যথা, গলাব্যথা, সাইনোসাইটিস, নাকে গন্ধ না পাওয়া ও কানে কম শোনা।
ধরন
পলিপ দুই রকমের হয়:
- ইথময়েডাল পলিপ।
- এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপ।
নাকের দুই পাশে, ওপরে যে সাইনাস আছে, যাকে ইথময়েডাল সাইনাস বলে, সেখান থেকে ইথময়েডাল পলিপ হয়। নাকের দুই পাশের ম্যাক্সিলারি সাইনাস থেকে এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপ হয়। এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপ সচরাচর এক পাশে হলেও ইথময়েডাল পলিপ সব সময় দুই পাশে হয়।
কোন বয়সে হয়
যেকোনো বয়সেই হতে পারে এটি। তবে নবজাতকদের পলিপ হয় না। এটি বেশি দেখা যায় মধ্য বয়সে। এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপ স্কুলগামী ছেলেমেয়ে এবং ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের বেশি হতে পারে। আর ইথময়েডাল পলিপ ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের বেশি হয়।
চিকিৎসা
অপারেশন এবং ওষুধ—পলিপের চিকিৎসাপদ্ধতি এ দুই ধরনের। তবে পলিপ ওষুধে পুরোপুরি ভালো হয় না। অপারেশন ভালো সমাধান। গ্রামে পলিপের চিকিৎসার নামে নাকে একধরনের অ্যাসিড লাগানো হয়, যা নাকের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট করে ফেলে।
পলিপের অপারেশন কেটে করা হলেও এখন না কেটেই করা যায়। এখন ফাংশনাল এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি হয়। আমাদের দেশেও এটি এখন নিয়মিত চিকিৎসা। পলিপের অপারেশনের পর সুস্থ হতে সাধারণত এক সপ্তাহ প্রয়োজন। খুব কম মানুষের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পর আবার পলিপ হয়।
প্রতিরোধ
অ্যালার্জি যাতে না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব কারণে অ্যালার্জি হয়, সেগুলো এড়িয়ে যেতে হবে।
- মাঝেমধ্যে গরম পানির ভাপ নিতে হবে।
- কাজের পর বাইরে থেকে এসে লবণপানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে।
- বাসার মেঝে ও বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
- যাদের ডাস্ট অ্যালার্জি আছে, তাদের কম্বল, তোয়ালে এড়িয়ে লেপ, গামছা ব্যবহার করতে হবে।
- সর্দি-কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
- অ্যালার্জি বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে।
নাক ভালো রাখার টিপস
খুব সাবধানে নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যেসব বিষয় এড়িয়ে যেতে হবে–
- ঘরের ধুলাবালি
- বাইরের দূষণ
- সিনথেটিক কাপড়
- পারফিউম
- ফুলের রেণু
- কসমেটিক পণ্য
- পরিবেশদূষণ।
সতর্কতা
অনেকে নাকের ভেতরের লোম টেনে ছেঁড়ার চেষ্টা করেন। এটি বিপজ্জনক। নাকে অকারণে আঙুল বা কটনবাড দেবেন না। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং টক বা ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।
ডা. মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ পাভেল, নাক কান গলাবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, ডিএলও, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে