একসময় নিউ থিয়েটার্স ছেড়ে দিলেন কানন দেবী। বিষণ্নতা এড়াতে মেট্রো সিনেমা হলে গেলেন ম্যাটিনি শো দেখতে। মাঝবিরতিতে লবিতে বসে চা খাচ্ছিলেন, তখন সামনে এসে দাঁড়ালেন প্রমথেশ বড়ুয়া। জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখন কী করছ?’
‘নিউ থিয়েটার্স ছাড়ার পর কিছু করছি না।’
‘কাজকর্ম করার ইচ্ছে আছে?’
‘কাজকর্ম করার ইচ্ছে নেই! বলেন কী মি. বডুয়া! শিল্পীর জীবনে কাজ না থাকা মানেই তো মৃত্যু। আপনি কি আমায় এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করতে বলছেন?’
‘আমি তা বলছি না। তুমি চাইছ কি না, জানা দরকার ছিল।’
পরদিন এমপি প্রোডাকশনসের মালিক মুরলী ধর চ্যাটার্জিকে নিয়ে এলেন। ‘শেষ উত্তর’ ছবিতে অন্যতম নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতে হবে—এই ছিল অনুরোধ।
এই ছবিতে নায়িকা দুজন। একজন মনোজের (বড়ুয়া) বাগ্দত্তা, অন্যজন প্রেমিকা। প্রথমজনের চরিত্রে অভিনয় করছেন যমুনা, দ্বিতীয়জন কানন দেবী।
একটি শটে মীনাকে (কানন) মনোজ বলছে, ‘আমার এলাহাবাদ যেতে ইচ্ছে করছে না। এখানেই থাকব।’
উত্তরে মীনা বলছে, ‘ইচ্ছা-অনিচ্ছা কি আপনার একার? আমি যদি বলি, আপনাকে থাকতে দেব না?’
অভিমান করে মনোজ মীনার কাছে গচ্ছিত ব্যাগটি ফেরত চাইলেন। মি. বড়ুয়া কাননকে বুঝিয়ে দিলেন, ‘ব্যাপারটা বুঝেছ তো? নায়ক অভিমান করেই ব্যাগটা ফেরত চায়। নায়িকার পাল্টা অভিমান সে বোঝেনি।’
শট শেষে প্রমথেশ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি খুশি তো? না মনের মধ্যে কোনো অসন্তোষ আছে?’
চমকে উঠলেন কানন। কারণ, কেন কাননকে ডিটেইলসে চরিত্র বুঝিয়ে দেন না, সে অভিযোগ ছিল তাঁর। কিন্তু এ কথা প্রমথেশ জানলেন কী করে? প্রমথেশ বললেন, ‘কানন, জীবনে একটা সময় আসবে যখন বুঝবে তোমার সম্পর্কে অন্যের ইম্প্রেশন জানবার জন্য কোনো আলোচনা করবার অথবা শুনবার দরকার করবে না। মানুষের একটা ভঙ্গিতেই এমন অনেক কথা বোঝা যায়, হাজারটা কথায় তা যায় না।’ কানন নিশ্চুপ হয়ে গেলেন।
সূত্র: কানন দেবী, সবারে আমি নমি, পৃষ্ঠা ৭৮-৮১
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে