সৈয়দ শামসুল হক পিকাসোর তৈরি ভাস্কর্য প্রথম দেখেছিলেন প্যারিসের এক প্রদর্শনীতে। জীবিতাবস্থায়ই পিকাসো খ্যাতির আকাশ ছুঁয়েছিলেন। সেই খ্যাতি রয়ে গেছে মৃত্যুর পরও। পিকাসোর জীবনাবসানের পর তাঁর সমস্ত কাজ একটি চিত্রশালায় রাখার জন্য একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আর সেই অর্থ সংগ্রহের জন্য ‘পিকাসো ও তাঁর কাজ’ নামে আয়োজন করা হয়েছিল একটি প্রদর্শনীর। প্রদর্শনীটি হয়েছিল প্যারিসের ‘শাঁজ লিজ’ নামের স্বপ্নের পথটির পাশে ‘ছোট্ট প্রাসাদে’।
সেখানেই সৈয়দ হক দেখেছিলেন পিকাসোর একটি ভাস্কর্য। একটি বাইসাইকেলের আসন ও হ্যান্ডেল দিয়ে পিকাসো তৈরি করেছিলেন একটি মহিষের মাথা। আসনটি দেয়ালে উল্টো করে রাখা, অর্থাৎ মাথাটা নিচের দিকে ঝোলানো ছিল। হ্যান্ডেল-বারের দুটি দিক ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ওপরের দিকে। ফলে এ দুটি অংশ দিয়েই তৈরি হয়ে গেছে মহিষের মাথা। বাড়তি আর কিছুই যোগ করা হয়নি। পিকাসোর আগে কে ভেবেছিল, এ-ও সম্ভব!
এ নিয়ে পিকাসোর একটি লেখা আছে। ভাবনার খোরাক জোগাতে পারে তা। সেই লেখায় পিকাসো বলছেন, যদি কোনো দিন কোনো দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে যায় এই চেনা পৃথিবী, পড়ে থাকে কিছু ধ্বংসাবশেষ আর অল্প কিছু মানুষ। এ রকম এক সময় সেই মানুষদের সবকিছুই আরম্ভ করতে হবে শুরু থেকে। ধরা যাক, পিকাসোর এই মহিষের মাথাও দুই ভাগ হয়ে গেল। তখন? পিকাসো বলছেন, তিনি ভাস্কর্য রচনা করেন বস্তুর ভিন্নতর সম্ভাবনা আবিষ্কার করার জন্য। একদিন যদি মানুষ সাইকেলের মূল ধারণাটি হারিয়ে ফেলে, তবে ভাস্কর্য থেকে সে আবার মূল ধারণা, অর্থাৎ সাইকেলে ফিরে যেতে পারবে। অর্থাৎ, বস্তুর রূপান্তর ও মূল রূপে প্রত্যাবর্তনই হলো পিকাসোর ভাস্কর্য রচনার মূল লক্ষ্য।
ভাগ হয়ে যাওয়া মহিষের মাথা থেকে সেই বেঁচে থাকা মানুষ ধীরে ধীরে আবিষ্কার করছেন বাইসাইকেল—ভাস্কর্য সম্পর্কে এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পিকাসোরই আবিষ্কার।
সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, ‘হৃৎকলমের টানে’, পৃষ্ঠা ৬১
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে