নেত্রকোনা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের বেপরোয়া গাড়িচাপায় নিহত রুমকী ও শাহিদের পরিবারে শূন্যতা নেমে এসেছে। মাকে হারানোর দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সাড়ে তিন বছরের আদিবা আফনাফ রাইফাকে। অপরিচিত কাউকে দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠছে সে। পুলিশ গত ১৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালের এই দুর্ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ১৩ জানুয়ারি ত্রিশালের জয়না বাজার থেকে ময়মনসিংহগামী একটি প্রাইভেট কারকে ত্রিশালের রাঘামারায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চাপা দেয় নেত্রকোনা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমানের জিপ গাড়ি। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেট কারের চালক শাহিদ নিহত হন। আহত হন আদিবার বাবা আলী আজম ভূঁইয়া রোমান ও মা মেহজাবিন আক্তার রুমকী। গুরুতর আহত রুমকী চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
এ ঘটনায় ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনো দুর্ঘটনাই কাম্য নয়। যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে নেত্রকোনা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমানের গাড়িচালকের কোনো ভুল ছিল না। নিহতদের পরিবারকে তাঁরা সহযোগিতা করবেন বলে জানালে দুর্ঘটনায় ক্ষতবিক্ষত গাড়িটি তাঁদের দেওয়া হয়। পুলিশ কাউকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেনি।’
নিহত মেহজাবিন আক্তার রুমকীর দুলাভাই গোলাম মাহবুব জুয়েল বলেন, ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে জয়না বাজার থেকে ময়মনসিংহ শহরের আকুয়ায় রুমকী তাঁর বাবার বাসায় স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে আসছিলেন। ত্রিশালের রাঘামারায় আসতেই ঢাকাগামী নেত্রকোনা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমানের বেপরোয়া জিপ গাড়ি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেট কারের চালক শাহিদ মারা যান।
জুয়েল বলেন, ‘এ ঘটনায় আহত হন রুমকী ও তাঁর স্বামী রোমান। তবে অক্ষত থাকে তাঁদের সন্তান রাইফা। আহত রুমকীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হলে ছয় দিন পর বুধবার মারা যান। রোমান ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রুমকীর মেয়ে রাইফাকে আমরাই দেখভাল করছি। দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনো রাইফাকে তাড়া করছে। কীভাবে যে আমরা তাকে সান্ত্বনা দেব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর ত্রিশাল থানার পুলিশ আমাদের ডেকেছিল। তাদের প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ এবং দাবিদাওয়া নেই। কপালে যা ছিল তা-ই হয়েছে। এখন শিশু রাইফার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত।’
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাঘামারা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাসেল মণ্ডল বলেন, খাদ্যনিয়ন্ত্রকের জিপ গাড়িটির সামনের ডান চাকার টায়ার ফেটে ডিভাইডারের ওপর দিয়ে গিয়ে প্রাইভেট কারকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেট কারের চালক মারা যান। পরে আহতদের উদ্ধার করে আমরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মোছা. পাবিয়া আক্তার বলেন, ‘একটি বিকট শব্দ হলে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি একটি গাড়ির ওপর আরেকটি গাড়ি। এর মধ্যে একটি শিশু হাত নেড়ে আমায় ডাকছে। তাড়াহুড়ো করে গিয়ে শিশুটিকে কোলে নিই। পাশেই রক্তাক্ত ছিল অনেকে। পরে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক শামীম আহম্মেদ বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে সবার মন খারাপ। তাই নিহত ও আহতদের পরিবারকে একটু সহযোগিতা করার জন্য আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছি। আমরা সবাই মিলে একটি ফান্ড তৈরি করে তাদের শুধু সহযোগিতা করতে চাই। এতে দোষের কিছু নেই।’
ছুটির দিনে সরকারি গাড়ি নিয়ে জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমানের ভ্রমণবিলাসে নানা মহলে প্রশ্ন উঠলেও এর ব্যাখ্যায় ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক আজিজুল হক বলেন, ‘গাড়িটি নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার অনুমতি আছে কি না, তা আমার জানা নেই। তবে শুনেছি, নেত্রকোনা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক ও তাঁর গাড়িচালক আহত হয়েছেন। অন্য কেউ মারা যাওয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে