অগ্রজ শিল্পীদের মধ্যে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদ, আনোয়ারুল হক, খাজা শফিক আহমেদ, মোহাম্মদ কিবরিয়াদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। এই শিল্পী-স্রষ্টারা কাইয়ুম চৌধুরীর মনের গভীরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন দেশাত্মবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, রুচিশীলতা, প্রগতিশীলতা। মানুষ হিসেবে এবং শিল্পী হিসেবে নিজেকে তৈরি করার ক্ষেত্রে এই সম্পর্কগুলোর অবদান ছিল।
সমসাময়িক বাঙালি শিল্পীদের প্রায় সবাই ইউরোপের সেরা শিল্পকলা বিদ্যাপীঠগুলোয় উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য গেছেন। কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে যাননি।
কিন্তু নিজের কাজের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ট্রেন্ডের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল। প্রচুর বই পড়তেন। সেখান থেকে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করতেন পৃথিবীর শিল্পকলার হালচাল। চিত্রকলা এবং গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে এতটাই আগ্রহ ছিল তাঁর, মনে হতো এ যেন তাঁর হাতের তালু।
কেন তিনি প্রাচ্য-প্রতীচ্যের কোথাও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের জন্য গেলেন না, সে প্রশ্ন করলে তিনি বলতেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে যাওয়া হয়নি।’কিন্তু কী এমন কারণ থাকতে পারে, যা তাঁকে প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সেরা কোনো বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আসার পথে বাধা দিয়েছে? অনেকেই জানেন, সেটা স্পর্শকাতর শিল্পীর অভিমান। এ কথা অবশ্য নিজের মুখে তিনি বলেননি। কিন্তু যাঁরা তাঁকে চিনতেন, তাঁদের অনেকেরই ধারণা সেটি।
ব্যাপার হলো, একবার তাঁকে পছন্দসই একটি দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানোর কথা ভাবা হয়েছিল। তাতে তিনি রোমাঞ্চ অনুভব করেছেন। কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেল সে দেশে যাচ্ছেন তিনি নন, অন্য কেউ। তাঁকে মনোনীত করা হয়েছে ইউরোপের আরেকটি দেশে যাওয়ার জন্য। এতে মনে দারুণ আঘাত পেয়েছিলেন শিল্পী। ব্যস! উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা আর ভাবলেনই না।
তাতে লাভ হলো আমাদের। তিনি নিজেই আবিষ্কার করলেন আঁকার রীতিনীতি, যা হয়ে উঠল তাঁকে চিনে নিতে পারার অব্যর্থ নিশানা।
সূত্র: রফিকুন নবী, দেশসেরা, জগৎসেরা শিল্পীকথা, পৃষ্ঠা ১৬০-১৬১
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে