আফরোজা খাতুন তাঁর নাবালক সন্তান ও নিজের ভরণপোষণ এবং দেনমোহর চেয়ে ২০২০ সালে রাজশাহীর দামুড়হুদার পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। গত বছরের ২২ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন আদালত। পুরো রায়টি এখন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
এ ছাড়া মাশু আক্তার খুনের ঘটনায় তাঁর বাবা মাকসুদুর রহমান ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানায় মামলা করেন। ওই মামলার বিচার শেষে গত বছরের ২২ নভেম্বর রায় দেন লক্ষ্মীপুরের দায়রা জজ আদালত। রায়ে মাশু আক্তারের স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই রায়ও এখন ওয়েবসাইটে পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে।
এ রকম প্রায় দুই হাজার রায় ও গুরুত্বপূর্ণ আদেশ পাওয়া যাচ্ছে ওয়েবসাইটে। প্রধান বিচারপতি গত বছর ওই অ্যাপস উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে সারা দেশের আদালতের রায় ও গুরুত্বপূর্ণ আদেশ এই অ্যাপসে আপলোড করা হচ্ছে। এতে ঘরে বসেই মামলার সব পক্ষসহ যে কেউ ওই রায় দেখতে পাচ্ছেন। রায়গুলো বাংলা-ইংরেজিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় পড়া যাচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এ রায়ের নকল সংগ্রহ করতে হবে।
এর আগে কারও স্থাপনা ভেঙে ফেলা বা কোনো কাজে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করলে আদেশ হলেও তা পেতে সময় লাগত বেশ কয়েক দিন। আর অনেক সময় আদেশ পেলেও তার নকল দেখাতে না পারলে ওই স্থাপনা রক্ষা করা সম্ভব হতো না। এখন এ রকম গুরুত্বপূর্ণ আদেশ সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে দেওয়ায় সব পক্ষই সহজে তা দেখতে পারছে। এতে সহজেই প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হচ্ছে বিচারপ্রার্থীর।
সুপ্রিম কোর্টের উদ্ভাবিত ছয়টি কোর্ট প্রযুক্তি গত বছরের ১৫ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, একবিংশ শতাব্দীর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ধারায় বিচার বিভাগে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একগুচ্ছ পরিষেবার সার্থক প্রবর্তন হতে যাচ্ছে। এগুলো বিচার বিভাগকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর করার প্রাথমিক পদক্ষেপ মাত্র। যে কাজগুলোর জন্য আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হতো, সেগুলো এখন কয়েকটি ক্লিকেই সম্পাদিত হবে।
প্রধান বিচারপতির অ্যাপস উদ্বোধনের পর থেকে এরই মধ্যে ১ হাজার ৮৭৫টি রায় ও গুরুত্বপূর্ণ আদেশ আপলোড করা হয়েছে ওয়েবসাইটে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দেওয়ানি আদালতের ৪৩৭, ফৌজদারি আদালতের ১ হাজার ৩৬৫ এবং পারিবারিক আদালতের ৭৩টি।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিচারপ্রার্থীকে আর রায়ের জন্য আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে না। তিনি চাইলে এমনকি মোবাইল ফোনে তাঁর রায় বা আদেশ দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। রায় বা আদেশের নকল পেতে আগে যে সময় ব্যয় হতো, এখন এর চেয়ে অনেক কম সময়ে তা সংগ্রহ করা যাচ্ছে। নতুন এই উদ্যোগে বিচারকাজে গতি আসবে এবং মামলা নিষ্পত্তি বাড়বে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ বলেন, নিম্ন আদালতের রায় অনলাইনে পাওয়া বিচার বিভাগের বিশাল অগ্রগতি। এটি মাইলফলক।
আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুক বলেন, নিম্ন আদালতের রায় অনলাইনে দেওয়া একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখন যেহেতু সবাই দেখতে পারছেন, এতে স্বচ্ছতা বাড়বে। বিচারপ্রার্থীরা আগে মনে করতেন, আইনজীবীরা রায়ের নকল দিতে গড়িমসি করছেন, এখন সেই ধারণা দূর হবে। বিচারকেরাও অন্যদের রায় দেখতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায়বদ্ধতা বাড়বে। এ ছাড়া বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি কমবে।
সব বিচারক তাঁদের রায় সঙ্গে সঙ্গেই অনলাইনে দিচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বলেন, এটি এখনো বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এখনো পরীক্ষামূলক। শতভাগ হতে একটু সময় লাগবে।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে