সাধারণত পানিতে ডুবে যাওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কোনো মরদেহ পানিতে ভেসে ওঠার কথা। কিন্তু তিন দিন হয়ে গেলেও নালার পানিতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদের দেহ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজ শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে উদ্ধার তৎপরতা সকাল থেকে শুরু করা হয়। কিন্তু বিকেল ৫টা পর্যন্ত সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সালেহ আহমেদের দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অভিযান পরিচালনাকারীরা বলছেন, অন্তত ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নালার শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত তল্লাশি শেষ হতে চলেছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। যদি লাশটি নালার আবর্জনার নিচে চাপা পড়ে থাকে তাহলে খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন হবে। নালার শেষ সীমানা কর্ণফুলী নদী থেকেও কোনো দেহ ভেসে ওঠার খবর পাওয়া যায়নি।
উদ্ধার তৎপরতা অভিযান পরিচালনাকারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিদর্শক হাসানুল আলম শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, বুধবার সকাল ১১টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে টানা তিন দিন উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আমরা শুরু থেকেই সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে লোকটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। উদ্ধার কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে।
উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে হাসানুল বলেন, ঘটনার দিন লোকটি যখন নালায় পড়ে গিয়েছিল তখন পানিতে প্রচুর স্রোত ছিল। স্রোতের টানে তিনি কোথায় চলে গেছে তা বোঝা মুশকিল। ঘটনাস্থল মুরাদপুর থেকে কর্ণফুলী নদীর কাছাকাছি পর্যন্ত অন্তত ৪ / ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নালায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু লাশটি কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, পানিতে ডুবে যাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাধারণত লাশ ভেসে ওঠার কথা। কিন্তু লাশটি ভেসে ওঠেনি। আমরা সম্ভাব্য সব জায়গায় তল্লাশি করেছি। কর্ণফুলী নদীতে যদি গিয়ে পড়ত তারপরও কোথাও না কোথাও লাশটি ভেসে উঠত। তবে যদি নালায় ময়লা আবর্জনার স্তূপ ও মাটির নিচে লাশটি চাপা পড়ে যায় তাহলে লাশটি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্যে, মুরাদপুর থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নালাটি। কয়েক বছর আগে থেকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হওয়া জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নালাটির বর্জ্য অপসারণ বন্ধ রেখেছেন। এদিকে জলাবদ্ধতার কাজ চলমান থাকায় নালাগুলোর বিভিন্ন অংশে মাটি ফেলা থেকে শুরু করে লোহার বেষ্টনী দিয়ে বাঁধ দিয়ে রাখা হয়েছে। এতে করে নালাগুলোতে কয়েক লাখ টন বর্জ্যের উপস্থিতি থাকার কথা বলা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমরা শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে গড়ে দৈনিক ২৫ থেকে ২৬ শ’ টন বর্জ্য অপসারণ করে থাকি। এগুলো নগরীর বাসা-বাড়ির বর্জ্য। তিনি বলেন, নালার বর্জ্য অপসারণের কাজ চসিকের প্রকৌশল বিভাগ দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করিয়ে থাকে।
জানা যায়, নিখোঁজ ব্যক্তির ছেলে ও স্বজনেরাও তৃতীয় দিনের মতো লাশটি পাওয়ার অপেক্ষায় উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনাকারী লোকজনদের সঙ্গে রয়েছে।
এর আগে গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় নগরীর মুরাদপুর মোড়ের সড়ক পাড় হচ্ছিলেন সালেহ আহমদ। অতিবৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমে থাকায় সব জায়গা একই রকম মনে হচ্ছিল। এতে তিনি পাশের একটি অরক্ষিত নালায় পরে স্রোতের সঙ্গে হারিয়ে যান। এ ঘটনার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলসহ স্থানীয়রা চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও তাঁকে এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ সালেহর ভাতিজা রুবায়েত হাসান চৌধুরী বলেন, ফটিকছড়ি মাইজভান্ডার দরবার শরিফে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরা পটিয়ার গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। ওনার দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। চকবাজার এলাকায় তিনি সবজি বিক্রি করতেন। বাবার নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে ওনার ছেলে সাদেকুল্লাহ মাহিন শহরে ছুটে আসেন। পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য এখানে রয়েছেন।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে