অ্যাম্বুলেন্সে স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সবজি বিক্রেতা আয়নালের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় শ্যামলী-এনআর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশকে তিরস্কার করেছেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চ রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরকে ডেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চান।
জবাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি বলে জানান শিশির মনির। তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তিন সন্তান পঙ্গু হয়েছেন।’
আদালত তখন শ্যামলী-এনআর ট্রাভেলসের এমডিকে বলেন, ‘মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি পরিবারের উপার্জনক্ষম লোকটি মারা গেল, বাকি সদস্যরা পঙ্গু হয়েছে। আপনারা একবারের জন্য খোঁজও নিলেন না। আপনারা আইন বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছেন না, সড়কে যা ইচ্ছা তাই করছেন। আর কত? টাকা লুট করছেন। আপনারা মানুষের পর্যায়ে নেই।’
আদালত এমডি রাকেশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। অথচ এখানে আপনার অবহেলা দেখা যায়। লাশ নিতে গিয়ে মানুষ মারা গেল। আপনারা একজন দেখতেও গেলেন না। আপনাদের কি মানবিকতা নেই? আপনারা চালকদের কোনো শিক্ষা দেন না। চালকেরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না, কাউকে পরোয়া করে না, যত্রতত্র গাড়ি চালান। পুলিশও যেন এসব দেখে না। ভাবখানা এমন যেন পুলিশের থেকেও আপনারা ক্ষমতাধর। পরে আদালত দু’পক্ষের আইনজীবীদের বসে টাকা দিতে নির্দেশ দেন। এছাড়া আগামী ১৪ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির জন্য নির্দেশ দেন।’
শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের পক্ষে ছিলেন তাজুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এর আগে সবজি বিক্রেতা আয়নালের পরিবারের সদস্য ও আহতদের জন্য ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ৭ আগস্ট রুল জারি করে হাইকোর্ট। আর আদালতের নোটিশে সাড়া না দেওয়ায় শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের এমডিকে তলব করা হয়।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘সবজি বিক্রেতা আয়নাল হোসেনের মৃত স্ত্রী ফিরোজা বেগমের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা সেতুর পাশে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে আয়নাল হোসেনের মৃত্যু হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সের চালকেরও মৃত্যু হয়। আর আহত হয় আয়নাল হোসেনের তিন সন্তানসহ বেশ কয়েকজন। ওই ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। আর শ্যামলী-এনআর ট্রাভেলসের সঙ্গে আলোচনা হলেও তারা কোনো আগ্রহ দেখায়নি।
পরে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট দায়ের করা হয়।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে