নাব্যতা-সংকট মোকাবিলায় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর ৪৭টি পয়েন্টে খননের উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। সংস্থাটির ড্রেজিং বিভাগ এ বছর ৩০ লাখ ঘনমিটার বালু উত্তোলন করবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। কিন্তু এই অঞ্চলের বিভিন্ন নৌযানমালিক এবং মাস্টাররা অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রতিবছর ড্রেজিংয়ের নামে সরকারের বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হলেও কাজের কাজ হচ্ছে না। অপরিকল্পিত এ ড্রেজিং ব্যবস্থায় মরে যাচ্ছে নদীগুলো।
গতকাল রোববার বরিশাল নৌবন্দরের সম্মেলনকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় ড্রেজিং বিভাগের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন নৌযানমালিক এবং মাস্টাররা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ সোমবার থেকে নৌবন্দরের চর জেগে ওঠা অংশে খনন শুরু করার কথা। তবে নদীর বালু নদীতেই কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক মো. আ. রাজ্জাকের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আব্দুল মতিন সরকার।
ড্রেজিং বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর খনন করার উদ্যোগ নেওয়া বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট হচ্ছে কীর্তনখোলা নদীর বরিশাল নৌবন্দর (একতলা ও দ্বিতল লঞ্চঘাট), বরিশাল স্টিমারঘাট, টুঙ্গিবাড়িয়া, লাহারহাট, ভেদুরিয়া, মেঘনা নদীতে মেহেন্দীগঞ্জের পাতারহাট লঞ্চঘাট, পশ্চিম ইলিশা, ভোলার নালা, খেয়াঘাট, পটুয়াখালীর কারখানা নদী, কলাগাছিয়া, খেপুপাড়া লঞ্চঘাট, পায়রা নদীসংলগ্ন ধুলিয়া নালা, পানপট্টি লঞ্চঘাট, কোড়ালিয়া, আমতলীর সুবিধখালী নালা, হলতা, গাবখান খালের মুখ, নেয়ামতি লঞ্চঘাট ও বানারীপাড়া লঞ্চঘাট।
মতবিনিময় সভায় লঞ্চমালিক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, পাতারহাটে ড্রেজিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে নৌকায় করে যাত্রীরা মাঝনদীতে এসে লঞ্চে ওঠে। বালু বেচবে, তাই পাতারহাটে খনন করতে দেওয়া হচ্ছে না।
অপর লঞ্চমালিক স্বপন খান বলেন, ড্রেজিংয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে না রাখায় সঠিক জায়গায় খনন হচ্ছে না। আজকে বরিশাল নগরে পানি ঢুকছে। নাব্যতা-সংকটের কারণেই নগর পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
বরিশাল নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শেখ আবুল হাশেম বলেন, সঠিক জরিপ না করায় ড্রেজিংয়ের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে বরিশাল নৌবন্দরের সামনে বারবার খনন করতে হচ্ছে। সাহেবের হাট ও টুঙ্গিবাড়িয়া খালের মুখে পানি নেই। শ্রীপুর, পাতারহাট ঘাটে নৌযান ভেড়ানো যায় না। এই যে প্রতিবছর ড্রেজিং হয়, তা কতটুকু হচ্ছে, এ বিষয়ে তাঁরা সন্দিহান। ঢাকা-বরিশাল নৌপথে অনেক পয়েন্টে পানি নেই।
এমভি সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, নৌবন্দরসহ বরিশাল-ঢাকা রুটের চারটি স্পটে খনন দরকার। এগুলো হচ্ছে নলবুনিয়া-বামনির চর, হিজলা-বাবুগঞ্জ, উলানিয়া থেকে মেঘনা। এ সময় একাধিক ব্যক্তি নদীর বালু খনন করে নদীতে ফেলার বিরোধিতা করেন।
সভায় বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ভুইয়া জানান, জরিপ করে দক্ষিণাঞ্চলে নাব্যতা-সংকট দেখা দেওয়ায় নদীর ৪৭টি পয়েন্টে খননের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে বরিশালে ১১টি ড্রেজার আনা হয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার বালু উত্তোলনে ব্যয় হবে ১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে নৌবন্দরে ১ লাখ ঘনমিটার বালু খনন করা হবে। তিনি বলেন, স্থান না পাওয়ায় সোমবার বরিশাল নৌবন্দরসংলগ্ন কীর্তনখোলার বালু কেটে নদীর গভীরে ফেলবেন।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাস্টারদের নানা প্রশ্নের জবাবে বলেন, পাতারহাটের খনন এলাকায় নদীভাঙনের কারণ দেখিয়ে ইউএনও ড্রেজিং বন্ধ রেখেছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় হচ্ছে। ভোলার সাহেবের হাট খাল দ্রুত খনন করা হবে।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে