স্বাধীনতা না থাকলে বেঁচে থাকা বড্ড কঠিন। সেটা রাষ্ট্রের জীবনে যেমন, মানবজীবনেও তেমনি। আর সেই স্বাধীনতাহীনতা যদি রবীন্দ্রনাথের জীবনে ঘটে, তাহলে সেটা কত বড় ব্যাপার হয়ে ওঠে, ভাবুন তো!
মংপুতে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়িতে। সেখানে একদিন খেতে বসেছেন। কবির অলক্ষ্যে মৈত্রেয়ী দেবী তাঁর পাতে তুলে দিয়েছেন মাছ।
রবীন্দ্রনাথ তা দেখে বললেন, ‘ও কী হচ্ছে! আমার সঙ্গে লুকোচুরি? ফস করে মাছ তুলে দিলে থালার ওপর? খাব না আমি!’
মৈত্রেয়ী তো অবাক। বললেন, ‘আপনার একি ব্যবহার বলুন তো? আপনি নিশ্চয়ই খেতেন, আমি দিলেম বলেই খাবেন না।’
‘নিশ্চয়ই তাই। আমার একটা স্বাধীন ইচ্ছে নেই? তোমরা যা বলবে, আমি তাই করব না, সর্বদা স্ট্রংলি রেজিস্ট না করলে আমার স্বাধীন মতামত একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই তো যা হয়েছে—এখন এটা খান, এখন ওটা খাবেন না, এখন চশমা পরুন, এখন ও জামাটা পরবেন না—কেন এত অধীনতা আমি সহ্য করব, কেন?’
বুড়ো খেপেছেন, বুঝতে পারলেন মৈত্রেয়ী। তাঁকে বশে আনতে হবে। তাই নরম কণ্ঠে বললেন, ‘আচ্ছা, তবে এখন নিন যা আপনার ইচ্ছে।’
‘না, কখনোই নয়। যখন বললে নিজে নিন, তখন বলব দাও তুলে দাও।’
আবার পড়াশোনার কথা যখন আসছে, তখন একেবারে ভিন্নভাবে বিষয়টিকে দেখছেন রবীন্দ্রনাথ। তখনকার স্বাধীনতা অন্যের, নিজের নয়।
সন্ধ্যাবেলায় পড়বেন কিছু। মৈত্রেয়ী জানতে চাইলেন, ‘আজ সন্ধ্যাবেলা কী পড়বেন?’
‘যা তোমরা অনুমতি করবে।’
‘বা! আপনার স্বাধীন ইচ্ছা যা বলবে, তাই তো?’
‘না। এ বিষয়ে আমার স্বাধীন ইচ্ছে নয়। সে কেবল কতটুকু খাব, ঘরে বসব না বারান্দায় বসব, সে সম্বন্ধে। এখানে তোমরা শ্রোতা, স্বাধীন ইচ্ছা তোমাদের পক্ষে।’
‘আজ তাহলে কবিতা পড়তে হবে।’
সে কথা মেনে নিতে এতটুকু অসুবিধা হয়নি রবীন্দ্রনাথের।
সূত্র: মৈত্রেয়ী দেবী, মংপুতে রবীন্দ্রনাথ, পৃষ্ঠা ৭৩-৭৫
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে