রাজধানীর পল্টনে দুই বাসের রেষারেষিতে কৃষক মো. জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫) নিহতের ঘটনায় বাসচালক মো. আল আমিনকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
র্যাব বলছে, চালক আল আমিন ২০১২ সাল থেকে বলাকা বাসে চার বছর ধরে হেলপার হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৭ সাল থেকে লাইসেন্স ছাড়াই মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন।
আজ সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ১০৫ ধারায় পল্টন মডেল থানায় মামলা করে। পল্টন মডেল থানাধীন বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে থেকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৬৩০) ঘাতক বাসটি জব্দ করা গেলেও গাড়িচালক পালিয়ে যান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ছায়াতদন্ত শুরু করে র্যাব-৩। রোববার রাতে মুন্সিগঞ্জ সদর থানা এলাকা থেকে বাসচালক মো. আল আমিনকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়।’
আল আমিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক জানান, তিনি কর্মজীবনের শুরুতে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে পাঁচ বছর কাজ করেছেন। ২০১২ সালে বড় ভাইয়ের মাধ্যমে বলাকা বাসে চার বছর হেলপারি করেন। ২০১৭ সাল থেকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক হিসেবে দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা মজুরিতে গাড়ি চালান। গত শনিবার সকালে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের বাস নিয়ে চিটাগাং রোড থেকে রাজধানীর কামারপাড়ার উদ্দেশে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পরবর্তী স্টপেজে অপেক্ষারত যাত্রীদের নেওয়ার জন্য গুলিস্তানে এসে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন। এ সময় আল আমিন অপর গাড়িকে ওভারটেক করার সময় নিয়ন্ত্রণহীন হারিয়ে ফেলেন। পথচারী মো. জাহাঙ্গীর মোল্লাকে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডে উঠে যায় তাঁর গাড়ি। ঘটনার পরপরই জনরোষের ভয়ে পালিয়ে যান।
এ র্যাব কর্মকর্তা জানান, আল আমিন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তাঁর ড্রাইভিংয়ের ওপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। গাড়ির হেলপার হিসেবে চালকের কাছ থেকে ড্রাইভিং শিখেছেন। ট্রাফিক নিয়মাবলি সম্পর্কে তাঁর কোনো জ্ঞানও নেই। যাত্রী নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে চালক ড্রাইভিংয়ের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন, তখনই গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয় এবং নিরীহ পথচারীদের জীবন প্রদীপ নিভে যায়।
আত্মীয়-স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বিদেশ যাত্রার জন্য শ্যালকের মেডিকেল টেস্ট করাতে গত ১ জুলাই ঢাকায় এসে চকবাজারে ভাগনের বাসায় ওঠেন জাহাঙ্গীর মোল্লা। ঘটনার দিন ২ জুলাই মেডিকেল টেস্ট করানোর জন্য আবদুল্লাহপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকালের দিকে শ্যালক, ভাগনে ও ভায়রাকে নিয়ে গোলাপশাহ মাজার থেকে হেঁটে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তাঁর শ্যালক ও ভাগনে রাস্তা পার হয়ে যান, তাঁর ভায়রা রাস্তার অপর প্রান্তে আইল্যান্ডের ওপরে ছিলেন এবং জাহাঙ্গীর তখন রাস্তার ওপর ছিলেন। এ সময় মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের দুটি বাস প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে একটি বাস নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে জাহাঙ্গীর মোল্লাকে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডে উঠে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালায় তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে