টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুনসী আবদুল মজিদ এ আদেশ দেন।
জানা যায়, গত বছর ১ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি মামলায় চুমকির বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। এরপর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তিনি। দুজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। আসামি প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রী কাঠগড়ায় উপস্থিত রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত বছরে ২৬ জুলাই দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পত্তি অর্জনের মামলায় প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে দুদক অভিযোগপত্র দেয়। একই বছর ১৫ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়।
প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে অবৈধ আয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে-চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি ও পাঁচলাইশ থানার ষোলোশহরের একটি বাড়ি, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, কক্সবাজারে চুমকির নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রদীপ দম্পতির ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হদিস মিলেছে। যার মধ্যে বৈধ আয় থেকে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকার সম্পদ পায় দুদক। বাকি ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অবৈধ সম্পদ বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অপরদিকে, চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী বলে আয়কর নথিতে উল্লেখ করলেও তার সমর্থনে প্রমাণ দিতে পারেননি। এ মামলার অভিযোগপত্রে সাক্ষীর তালিকায় ২৯ জনের নাম রয়েছে।
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষে আসামির জামিনের বিরোধিতা করেছি। আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার উপযুক্ত প্রমাণ রয়েছে। তিনি মৎস্য খামার করার মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্বামীর অবৈধ টাকা ভোগ করছিলেন। আর অবৈধ টাকাকে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করে বৈধতা দিতে চেয়েছিলেন।
আসামি চুমকির আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, আসামি পালাননি। তিনি দেশেই ছিলেন। অসুস্থতা ও নানা সমস্যার কারণে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেননি। এ কথাও আমরা শুনানিতে বলেছি।
ওসি প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য তারিখে চুমকি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। গত বছর ১৫ ডিসেম্বর দুজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর আজ মামলার তদন্তকারীসহ ২৪ জন সাক্ষ্য দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হন। সিনহা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর। এ ঘটনায় করা সিনহার বোনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রদীপ ২০২০ সালের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন। ওই মামলায় গত বছর ২৭ জুন প্রদীপসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ বছর কক্সবাজার আদালতে ৩১ জানুয়ারি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে