সম্প্রতি জাকার্তা থেকে রাজধানী সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির নতুন এই রাজধানীর নাম হবে ‘নুসানতারা’। বোর্নিও দ্বীপের ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমির ওপর গড়ে তোলা হবে নতুন এই শহর। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। নতুন একটি রাজধানী গড়ে তোলার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে মিসরেরও। গত ডিসেম্বরে নাম ঠিক না হওয়া নতুন প্রশাসনিক রাজধানীর বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানা গেছে, নতুন শহরটি হতে পারে কায়রো থেকে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার পূর্বে। কিন্তু দেশগুলো কেন তাদের রাজধানী পরিবর্তন করে? নানা উদাহরণে এর উত্তর উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে।
ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন এলাকার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে বা একত্র করতেই রাজধানীর জন্য স্থান নির্বাচন করে আসছেন শাসকেরা। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ অব্দে উচ্চ এবং নিম্ন মিসরকে একত্র করে মেমফিসকে এর কেন্দ্রে স্থাপন করেছিলেন রাজা মেনেস। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ও দক্ষিণের রাজ্যগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আপসমূলক সমাধান হিসেবে ১৭৯০ সালে ওয়াশিংটন ডিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন। আর মেলবোর্ন এবং সিডনির মধ্যে দূরত্ব কমাতে ২০ শতকের শুরুতে ক্যানবেরাকে রাজধানী হিসেবে বেছে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
তবে ঐক্যের জন্য রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হয়নি সব দেশে। ১৯৯১ সালে লাগোস থেকে দক্ষিণ উপকূলের আবুজায় রাজধানী স্থানান্তরিত করে নাইজেরিয়া। লাগোসে ঐতিহাসিকভাবে খ্রিষ্টান ইয়োরুবার আধিপত্য ছিল। আর আবুজাকে মনে করা হতো দক্ষিণে খ্রিষ্টান ও উত্তরে মুসলিমদের মধ্যবর্তী একটি নিরাপদ অঞ্চল। তবে আবুজায় রাজধানী সরিয়ে নেওয়ায় বেশি লাভবান হয়েছিল নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় ইসলামি উপজাতি হাউসা সম্প্রদায়। পরে এ নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়, যা এখনো চলছে।
সব সিদ্ধান্ত যে ভালো উদ্দেশে হয় না, তারও অনেক উদাহরণ রয়েছে। অনেক নেতা তাঁদের সুবিধামতো স্থানে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলতে চান। যেমন মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদো, যা জান্তার ক্ষমতার আসন সুরক্ষিত করার জন্য নির্মিত একটি প্রকল্প। ২০১৭ সালে ইকোয়েটরিয়াল (বিষুবীয়) গিনির একনায়ক প্রেসিডেন্ট থিয়োডর ওবিয়াং মালাবো থেকে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন ওয়ালায়। কারণ, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর বিদ্রোহী এবং সমালোচকদের থেকে দূরে একটি নিরাপদ জায়গায় থাকতে আগ্রহী ওবিয়াং।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে