শিশির ভেজা মাঠে ইনিংসের শুরু থেকেই বল গ্রিপ করতে সমস্যায় পড়ছিলেন রুবেল হোসেন, ইসুরু উদানারা। মিনিস্টার গ্রুপ বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে ফায়দা তুলে নিতে একদমই ভুল করেননি আন্দ্রে ফ্লেচার, রনি তালুকদার, থিসারা পেরেরারা। তাঁদের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে খুলনা টাইগার্স।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৮৩ রান করেছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঢাকা। জবাবে আন্দ্রে ফ্লেচারের ২৩ বলে ৪৫, রনি তালুকদারের ৪২ বলে ৬১ ও থিসারা পেরেরার ১৮ বলে অপরাজিত ৩৬ রানের সুবাদে এক ওভার বাকি রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন খুলনা।
যদিও রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি খুলনার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই শুভাগত হোমের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম। তবে পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে কোনো ভুল করেননি আরেক ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার। জার্সির পেছনে ‘স্পাইসম্যান’ লিখে খেলতে নেমে ঢাকার বোলারদের নিজের ঝাঁজ পুরোটা দেখিয়ে দেন ক্যারিবীয় কিপার-ব্যাটার। তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করেছেন তিনে নামা রনি তালুকদারও।
সবচেয়ে বড় ঝড়টা বয়ে যায় রুবেল হোসেনের ওপর দিয়ে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে প্রথম চার বলে ফ্লেচারের কাছে ৪,৬, ৪ ও ৪ হজম করেন রুবেল। এক বল ডট দিয়ে শেষ বলে আবার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেই ওভার থেকে ২২ রান নিয়ে নেন ফ্লেচার।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আন্দ্রে রাসেলকেও জোড়া বাউন্ডারি মারেন ফ্লেচার। খুলনা ম্যাচ জয়ের রসদ পেয়ে যায় তখনই। দুর্দান্ত ব্যাট করতে থাকা ফ্লেচারের বিদায়ঘণ্টা বাজে আম্পায়ারের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। রাসেলের লেগ স্টাম্পের ডেলিভারি তাঁর প্যাড ঘেঁষে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ শাহজাদের গ্লাভসে।
ঢাকার ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। তা দেখে রীতিমতো হতবাক এক অভিব্যক্তি দেন ফ্লেচার। এবারের বিপিএলে রিভিউ সিস্টেম না থাকায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ফিরতে হয় তাঁকে।
এরপরও রানের গতি থামতে দেননি রনি তালুকদার। তবে হতাশ করেন অধিনায়ক মুশফিক। রুবেল হোসেনের এক বাউন্সারে গ্লাভসে লাগার পর ইবাদত হোসেনের বাউন্সারেই পরাস্ত হন তিনি।
ইনিংসের ১২ তম ওভারে মাত্র ৩১ বলেই নিজের ফিফটি তুলে নেন রনি। তাঁকেও আউট করেন ইবাদত। রনি ফেরার সময় ৩২ বলে ৫০ রান প্রয়োজন ছিল খুলনার। এই চাহিদাকে মামুলি বানিয়ে ফেলেন লঙ্কান হার্ড হিটার থিসারা পেরেরা। স্বদেশি পেসার ইসুরু উদানার দুই ওভারে দুইটি করে বাউন্ডারি মেরে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন তিনি।
শেষ দুই ওভারে খুলনার দরকার ছিল ১২ রান। রাসেলের করা ১৯ তম ওভারের তৃতীয় বলে চার ও শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন মেহেদী হাসান।
এর আগে শিশিরের কথা মাথায় রেখে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন খুলনার অধিনায়ক মুশফিক। তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি সতীর্থ বোলাররা।
শুরু থেকেই মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন মোহাম্মদ শাহজাদ। অপর প্রান্তে রয়ে-সয়ে উইকেট বাঁচিয়ে খেলছিলেন তামিম ইকবাল। দলীয় ৬৯ রানে শাহজাদ আউট হলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ৮ রানের জন্য শাহজাদ ফিফটি না পেলেও প্রত্যাবর্তন ম্যাচে ঠিকই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তামিম। ৫০ করে কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে নাভিন উল হকের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন দেশসেরা ওপেনার।
শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর ২০ বলে ৩৯ রানের সুবাদে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৩ রানের বড় সংগ্রহ পায় ঢাকা। শেষ ৫ ওভারে ৫৮ রান যোগ করেছে তারা। খুলনার হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রাব্বি।
তামিমের প্রত্যাবর্তন রাঙা ফিফটি ছাপিয়ে খুলনার নায়ক বনে গেছেন রনি। ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা
২০ ওভারে ১৮৩/৬
তামিম ৫০, শাহজাদ ৪২
রাব্বি ৩/৪৫, থিসারা ১/২৭
খুলনা টাইগার্স
১৯ ওভারে ১৮৬/৫
রনি ৬১, ফ্লেচার ৪৫
ইবাদত ২/২৭, রাসেল ২/৪২
ফল: খুলনা টাইগার্স ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: রনি তালুকদার (খুলনা টাইগার্স)
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে