বয়সভেদে খাবার ও পুষ্টির চাহিদায় বিভিন্নতা রয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে শারীরিক ও মানসিক বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে থাকে। পাশাপাশি দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি। তাই খুব সচেতন হতে হবে এই সময়ে তাঁদের পুষ্টির চাহিদার ক্ষেত্রে।
খাবারের তালিকায় যা যা থাকতে হবে
- পঞ্চাশের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের বিপাকের হার অনেক কমে যায়। তাই তাঁদের ক্যালরি কমিয়ে দেওয়া হয়। তালিকায় শর্করাজাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে জটিল শর্করাজাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন ভাত, মিষ্টি আলু, রুটি, ভুট্টা ইত্যাদি। সরল শর্করাজাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। যেমন চিনি, মধু, ফলের রস ইত্যাদি।
- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশির ক্ষমতা ও শক্তি ক্ষয় হতে শুরু করে, যা সর্কোপেনিয়া নামে পরিচিত। এটি বৃদ্ধদের হাড়ের ক্ষয়, দুর্বলতা ও স্বাস্থ্যহীনতার একটি অন্যতম কারণ। তাই প্রোটিনজাতীয় খাবারকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। খাবারের তালিকায় ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল, মটরশুঁটি, মাশরুম, বাদাম, বীজ ইত্যাদি রাখতে হবে।
- বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য বয়স্কদের একটি সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা হিসেবে দেখা দেয় বলে আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। আঁশযুক্ত খাবার অন্ত্রের গতিবিধিও ঠিক রাখতে কাজ করে। এ রকম খাবারের মধ্যে আছে লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, শাকসবজি, মটরশুঁটি, বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ইত্যাদি।
- বয়স্ক মানুষের অনেকেরই রক্তস্বল্পতা, রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া, সোডিয়ামের মাত্রা কমে বা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। তাই প্রতিদিনের খাবারে রঙিন শাকসবজি, নরম ভিটামিন সিযুক্ত ফল, ডাবের পানি ইত্যাদি রাখতে হবে।
এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২ জাতীয় খাবার রাখতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে দুধ, দই, পনির, তিল, কচুশাক, কলমিশাক, শিমের বিচি, কলা ইত্যাদি। - তরলজাতীয় খাবার বৃদ্ধ বয়সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় শারীরিক পরিশ্রম কম হয় বলে পিপাসা কমে যায়। ফলে প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়। তাই সারা দিনে ২-৩ লিটার পানি পান করতে হবে। তবে অতিরিক্ত চা, কফি, কোমলপানীয় ও প্যাকেটজাত ফলের জুস এড়িয়ে চলতে হবে।
যা লক্ষ রাখতে হবে
- এ সময় খাবারে অরুচি দেখা দেয় ও প্রচুর অ্যাসিডিটি হয়। তাই সহজে হজম হয় সে ধরনের খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
- ২-৩ ঘণ্টা পরপর অল্প করে হলেও কিছু খেতে হবে।
- ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুডজাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
- মসলাজাতীয় ও ঝাল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- দৈনিক ২০-৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।
- রোগভেদে খাবারে ভিন্নতা আসবে। সে ক্ষেত্রে একজন ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্টের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারের তালিকা তৈরি করতে হবে।
লেখক: পুষ্টিবিদ, লেজার ট্রিট
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে