পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চিরচেনা সেই দৃশ্য দেখার জন্য উন্মুখ সবাই। নতুন পোশাকে কাঁধে বই-খাতার ব্যাগ ঝুলিয়ে প্রায় আড়াই মাস পর শিক্ষার্থীরা ফিরেছে স্কুলে। কচি-কাঁচার কলরবে মুখরিত স্কুল প্রাঙ্গণ। প্রিয় শিক্ষক, বন্ধু ও সহপাঠীদের কাছে পেয়ে থামছে না তাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস। শিক্ষকেরাও সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট। এর আগে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে ‘হোম ভিজিট’ করেন শিক্ষকেরা।
জানা যায়, বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১০ জন ছিল। গত বুধবার পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১৬০ জন। কিছু অভিভাবক আতঙ্কে এখনো বাইরে থাকায় অনেকে ভর্তি হয়নি।
এর আগে, তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে গত ২৮ নভেম্বর উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা হয়। এতে নিহত হন বিজিবির ল্যান্স নায়েক রুবেল মণ্ডল। পরে এ ঘটনায় ৯৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ললিত চন্দ্র রায়। ঘটনার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে আবার পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান।
মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সৌদি আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২৯ নভেম্বর থেকে চার দিন আমরা একাডেমিক ভবনে প্রবেশ করতে পারিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান করায় আমরা স্কুলের মাঠে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কয়েক দিন তো ছিলই না, পরবর্তী সময়ে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেমন শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি। ১৪ ডিসেম্বর থেকে কিছু শিক্ষার্থী স্কুলে আসা শুরু করে, যা অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার প্রবণতা দেখা গেছে মামলার প্রধান আসামি মারুফ হোসেন অন্তিক গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে গুমোট একটা অবস্থা ছিল। নির্বাচনী সহিংসতার পর থেকে বলা যায়, পুরো এলাকা মানুষ শূন্য ছিল। এখন এলাকায় মানুষজন ফিরতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক যত্নও নেওয়া হয়েছে আলাদা পরিকল্পনা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা উচ্ছ্বসিত, আমাদের শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বসিত। শিক্ষার্থী ছাড়া আমাদের আমাদের জীবন অর্থহীন। তারা এসেছে, ক্যাম্পাস প্রাণচঞ্চল ফিরে পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে আমরা হোম ভিজিট করছি। তাদের স্কুলে আসতে বলছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি তারা না আসে, তাহলে পিছিয়ে পড়বে। করোনায় দীর্ঘদিন গেল। এখন গুরুত্বপূর্ণ সময়। পড়াশোনা নিয়ে মূল্যায়ন চলছে। সে কারণে তাঁদের উপস্থিতি দরকার।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফা আখতার বলেন, ইউপি নির্বাচনী সহিংসতার পর কিছুদিন আলামত হিসেবে বিদ্যালয়টি আয়ত্তে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন তাঁদের আয়ত্তে নেই। বিদ্যালয় খোলা হয়েছে এবং শিক্ষকেরা নিয়মিত যাচ্ছেন। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর ব্যাপারে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে হোম ভিজিট করার জন্য।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে